|
|
|
|
পুজোয় প্যান্ডেলে পঞ্চাশ প্রবীণ |
ঠাকুর দেখার দিন
গুনছেন দেবারুরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
|
|
কত বছর পরে দেবীর মুখ দেখব।
কথা শেষ করতে পারলেন না, চোখের কোল ভিজে গেল গিরিধর রায়ের। মাথা ভরা এলোমেলো চুলে চিরুনি পড়েনি। রোদে পুড়ে তামাটে শরীর ভাঙা চোয়ালে ঝুলে পড়া চামড়ার ভাজে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। এ বার আষাঢ়ে ৮১ বছরে পা রেখেছেন। মালবাজার মহকুমার ঝাড়মাটিয়ালি গ্রামের এই প্রবীণ দিনমজুরের ছেলেমেয়ে নাতিনাতনি সবাই আছেন। কিন্তু থেকেও নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। যে ছেলের হাত ধরে শহরের এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে দেবী দর্শন করাতেন। প্রায় এগারো বছর হয়েছে তাঁদের কেউ ফিরেও তাকান না বলে অভিযোগ। তাই এতদিন দেবীর মুখ দেখা হয়নি। সম্প্রতি লাটাগুড়ি প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ সমিতির কর্তারা গ্রামে ঘুরে প্রবীণদের একদিন পুজো দেখানোর আয়োজনের কথা জানাতে বিহ্বল হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এখন শুধু দিন গুনছি। ওঁরা গাড়িতে নিয়ে যাবে। পুজো দেখাবে। খাওয়াবে।” দিনমজুর দেবারু রায় জানান, তিন ছেলে বিয়ে করে পৃথক হয়েছে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খাই। বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছি। দিনমজুরি খেটে কিছু রোজগার না করলে নয়। এটা কী জীবন। দেবীর মুখ দেখার সুযোগ পাই না। কেউ নিয়ে যায় না। এ বার তো সুযোগ মিলেছে কী প্রার্থনা করবেন? দেবারুবাবুর পাশে বসে থাকা অশীতিপর দিনমজুর কাশীনাথ রায় গলা চড়িয়ে জানালেন, প্রাথর্না কিছু নেই। তিনি বললেন, “বছর পরে দেবী সাজিগুজি আইসেছে। এতদিন কিছু চান্দাও নাই। এইবার পুছিম কেনে ব্যাটা বেগল করি দিল মোক।”
রাজবংশীতে বলা শব্দগুলো যেন ঘূর্ণির মতো গ্রাম আর ঠাকুরের থান ছুঁয়ে গ্রামের শরীরে পাক খেয়ে গেল—‘দেবী সেজেগুজে আসছেন। এত দিন কিছু চাইনি। এ বার তাঁকে জিজ্ঞেস করব, কেন একমাত্র ছেলে আমাকে পৃথক করে দিল।’ কাশীনাথের কথা শুনে উদাস হয়ে যান পারাউ রায়, বিলাতি রায়, শান্তিবালা রায়, মাধবী রায়। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বিলাতি দেবী বলেন, “ছেলেমেয়েদের নিয়ে মণ্ডপে ঘুরে কত হইচই করেছি। ওঁরা বড় হতে কেমন করে সব পাল্টে গেল। এত দিন খুব অসহায় লেগেছে। এ বার মনে হচ্ছে আমাদের জন্য কেউ না কেউ ভাবে।” প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ সমিতির আয়োজনের কথা শুনে ওই প্রবীণরা গ্রামে সভা করেছেন। কোথায় যেতে চান সে কথা উদ্যোক্তাদের কাছে জানিয়েও রেখেছেন। প্রবীণ দিনমজুরদের এমন উৎসাহ দেখে অবাক প্রবীণ নাগরিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, “এতটা সাড়া মিলবে ভাবতে পারিনি। ওঁরা জল্পেশ মন্দিরে পুজো দিতে চেয়েছেন। সেটাও করা হবে।” ওই উদ্যোগের তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার পক্ষে অনির্বাণ মজুমদার বলেন, “মহাষ্টমীতে গ্রামের প্রায় পঞ্চাশ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ময়নাগুড়ি ও লাটাগুড়ির কিছু পুজো দেখানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|