শিলিগুড়ির রাস্তায় উদ্ধার কিশোরী
নিজস্ব সংবাদাদাতা • শিলিগুড়ি |
এক কিশোরীকে রক্তাক্ত ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হল শিলিগুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হিলকার্ট রোডের একটি রেস্তোরাঁর সামনে পড়েছিল ওই কিশোরী। পথচারী এক দম্পতি তাকে দেখে ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, তখন ওই কিশোরীর হালকা হলুদ-সাদা চুড়িদার রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, ফোন করার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ পৌঁছয়। তবে পুলিশই কিশোরীকে প্রথমে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে তাকে ভর্তি করানো হয়। গুরুতর আহত ওই কিশোরী রবিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য তার নাম, ঠিকানা বা অভিযুক্তদের পরিচয় জানাতে পারেনি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, ওই কিশোরীকে শহরের বাইরে থেকে নিয়ে এসে হিলকার্ট রোডে ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতীরা। হিলকার্ট রোড জুড়ে ছড়িয়ে রাখা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যায়নি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর বয়স বছর ১৫-১৬।
|
শহরের হিলকার্ট রোডে কিশোরীর অচৈতন্য দেহ পড়ে থাকার ঘটনাকে ঘিরে শিলিগুড়িতে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের একাংশের নিষ্ক্রিয়তার জেরেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার-এর কাছে স্মারকলিপি দেয় দার্জিলিং জেলা যুব কংগ্রেস। তাঁদের অভিযোগ, “শহরের অন্যতম মূল রাস্তায় রাতে পুলিশের নজরদারি কেমন, তা এই ঘটনা থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। ১০০ নম্বরে ডায়াল করা হলে পুলিশ অনেক দেরিতে এসেছে।
দ্রুত ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়েছে সংগঠনের তরফে। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক বলেন, “টেলিফোন করা হলেও পুলিশ সঠিক সময়ে আসেনি। তার পরেও মেয়েটিকে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। রিকশা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিশ কর্মীরা কী করে এমন অমানবিক কাজ করলেন তা ভাবতেই পারছি না।” উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন সুজয়বাবু। ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন হিলকার্ট রোড ব্যবয়াসী সমিতিও। তাঁরা জানান, শুধু ফোন করার পর পুলিশ দেরিতে এসেছে তা নয়, রিকশা করে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ এলাকার নজরদারির বিষয়টি নিয়ে জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশদের অভিযোগ, “হিলকার্ট রোডের ওই এলাকার একটি সিনেমা হল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি নানা লোকজনের আনাগোনা চলে। নানা অসামাজিক কাজেরও অভিযোগ আসে।” |
ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য বিজয় গুপ্ত বলেন, “রাতে এলাকায় সবসময় পুলিশি টহল থাকার কথা। তা অনেক সময়ই থাকে না। আমরাও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তুলেছি।” তাঁর অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে থানায় লিখিত জানিয়েছিলাম। রাত বাড়লেই ওই এলাকায় মদ্যপদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মহিলাদের কটুক্তি করা হয়। এসব জানার পরেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।
কিশোরীটিকে দেখতে মেডিক্যাল কলেজে যান গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু তাঁদেরকে কিশোরীকে দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন সংগঠনের সম্পাদক স্নিগ্ধা হাজরা। তিনি বলেন, “শহরের কোনও নিরাপত্তা নেই। ১০০ নম্বরে টেলিফোন করলে অনেক সাড়া মেলে না। আমাদের মেডিক্যাল কলেজে মেয়েটিকে দেখতেও দেওয়া হয়নি।” ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, “দোষীদের চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” তবে ঘটনাস্থলে দেরি করে পুলিশ পৌঁছানোর অভিযোগ মানতে চাননি শহরের পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ পৌঁছয়। তদন্ত শুরু হয়েছে। কিশোরীর পরিবারের খোঁজ চলছে। পুজোর মুখে সমস্ত থানাকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।” |