শেষ পর্বের ব্যস্ততা, যেন ছবির কোলাজ পালপাড়া
টানো জোরে হেঁইয়ো, জোরসে টানো হেঁইয়ো...
কৃষ্ণনগরের নতুনবাজার পালপাড়াতে রবিবার সকালে ব্যস্ততা তুঙ্গে। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট, বড় লরি। এক এক করে প্রতিমা গাড়িতে উঠছে। আর একটু পরেই ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে রওনা দেবে মণ্ডপের পথে। সকালের ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে ক্রমশ চড়ছে দুই স্কুল পড়ুয়ার গলা, ‘‘পুজোর আগে শেষ রবিবার। সব ঠাকুরের গাড়ি বেরিয়ে গেল। পাড়ার পুজোর চাঁদাটা উঠবে কী করে?” চাঁদার বিল হাতে হাঁটতে হাঁটতে তারা গলির বাঁকে মিলিয়ে গেল।
গাড়িতে প্রতিমা ওঠার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চিত্‌কার করে উঠলেন এক পুজো কর্তা, “সাবধানে, সাবধানে। যাঃ, কলকাটা খুলে গেল, এবার?” শ্রীরামপুর থেকে প্রতিমা নিতে আসা দীপক ঘোষকে আশ্বস্ত করলেন কৃষ্ণনগরের প্রতিমা শিল্পী সুবল পাল, “চিন্তা করবেন না। গাড়ির সঙ্গে আমাদের লোক যাবে। পথে প্রতিমার যেটুকু ক্ষতি হবে মণ্ডপে গিয়ে তা মেরামত করে দেবে ওরা।” কপালের ঘাম মুছতে মুছতে হাসিটা চওড়া হল দীপকবাবুর।
মণ্ডপের পথে প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র।
ক’দিনের বৃষ্টিতে পথঘাট প্যাচপ্যাচে। গাড়ির ভিড় বাঁচিয়ে এগোতে গিয়ে অনেকেই পা হড়কে সটান কাদায়। পাশ কাটিয়ে দৌড়ঝাঁপ ফোটোগ্রাফারদের। একটুর জন্য আর যাই হোক, পালপাড়ার ‘সাবজেক্ট মিস’ করা যাবে না। “গত বারের তুলনায় এক লাফে গাড়ি ভাড়া অনেক বেড়ে গিয়েছে।” চায়ের ভাঁড়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে কথাটা তুললেন বারাসাত থেকে প্রতিমা নিতে আসা অরিন্দম চক্রবর্তী। “যেভাবে তেলের দাম বাড়ছে তাতে ভাড়া না বাড়িয়ে উপায় কী। রাস্তার অবস্থাটা একবার দেখেছেন?” হাত নেড়ে জটিল পাটিগণিতের হিসেব দিতে থাকেন মাঝবয়সী লরি চালক।
পালপাড়ার মোড় এ দিন জমজমাট। শেফালি সাহার চায়ের দোকানে থিকথিকে ভিড়। রুটি, ঘুঘনি, বিস্কুট, চা। দোকানের সামনে পাড়ার নেড়িদের ঘুরঘুর। মাঝেমধ্যে উড়ে আসছে বিস্কুটের টুকরো, পোড়া রুটি। লরিতে প্রতিমা তোলার ফাঁকে কুলি সর্দার, নির্মল মণ্ডল বললেন, “ভোর থেকে সমানে চলছে। আমার দলের ৭৫ জনের মধ্যে ৪৫ জনই চলে গিয়েছে প্রতিমার সঙ্গে। এক একটা বড় প্রতিমা তুলতে প্রায় ৩০ জন লেগে যাচ্ছে। তারপর গাড়ির সঙ্গে আবার সাত আটজনকে পাঠাচ্ছি। মণ্ডপে নামানোর সময় পুজো কর্তারা ঠিক সামলে নেবেন।” দমদমের নাগেরবাজার থেকে এই প্রথম কৃষ্ণনগরে প্রতিমা নিতে এসেছিলেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কলকাতার তুলনায় এখানে প্রতিমা নিতে আসার খরচ একটু বেশি ঠিকই। তবে কৃষ্ণনগরের প্রতিমা সত্যিই অন্যরকম। কোনও তুলনাই হয় না।”
বেলা বাড়ে। কথার পিঠে আসে আরও কথা। চায়ের দোকানে ভিড়টা একটু কমের দিকে। এক এক করে মণ্ডপের দিকে পাড়ি দেয় গাড়িগুলো। সুবল পালের বাড়িটা খাঁ খাঁ করে। এতদিন ধরে এ বাড়িতেই তো ছিল জগজ্জননীর জমজমাট সংসার। প্রতিমার পিছন পিছন বাড়ির দরজার কাছে এসে দাঁড়ান সুবলবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী। হাতদুটো কপালে উঠে যায়। গলাটা যেন কেমন ধরে এসেছে। অস্ফূটে শোনা গেল, “দুগ্গা দুগ্গা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.