ঢালাও ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিতর্ক
প্রশ্নটা ছিলই। শনিবার লেক টাউনের ক্যানাল স্ট্রিটে একরত্তি শুভমের মৃত্যু সেই প্রশ্নটাই ফের উস্কে দিয়ে গেল।
দায়সারা একটা পরীক্ষা দিয়ে মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। যা পকেটে নিয়ে মহানগরীতে যে কেউ পেয়ে যাচ্ছেন অবাধে গাড়ি চালানোর অধিকার।
কী রকম সেই পরীক্ষা-পদ্ধতি?
পরিবহণ-কর্তারা জানাচ্ছেন, এর প্রথম ধাপ হাতে-কলমে গাড়ি চালানো।
ম্যাডক্স স্কোয়ার, সাদার্ন অ্যাভিনিউ বা আলিপুরের রাস্তায় বড়জোর কুড়ি মিটার দূরত্ব গাড়ি গড়িয়ে দিয়ে মসৃণ ভাবে ব্রেক কষে দাঁড় করাতে পারলেই কেল্লা ফতে। পরীক্ষক লিখে দেবেন, ‘ভেরি গুড’। পরীক্ষার্থী মোটর ট্রেনিং স্কুলের পড়ুয়া হলে তো কথাই নেই। সামান্য ভুল পরীক্ষক এড়িয়ে যাবেন। অন্য প্রশ্নও তাঁরা করবেন না। করবেনই বা কী করে! দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা-র মধ্যে প্রায় দুশো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে হয় এক জন পরীক্ষককে। এর বেশি সময়ই বা এক জনের পিছনে পরীক্ষক দেবেন কোথা থেকে!
পরের ধাপ মৌখিক পরীক্ষা।
সেখানেও পাশ করতে বেশি হ্যাপা নেই। প্রথমে পরীক্ষক কিছু চিহ্নের অর্থ জানতে চাইবেন। যা পরীক্ষার্থীরা বেশির ভাগ সময়ে লাইনে দাঁড়িয়েই মুখস্থ করে ফেলেন। না পারলেও সুযোগ মিলবে। পরীক্ষক বলে দেবেন, মিনিট পনেরো ঘুরে আসুন। ফিরলে একই প্রশ্ন। মোটর ট্রেনিং স্কুলের পরীক্ষার্থীদের জন্য একই ভাবে ‘বিশেষ ছাড়’ রয়েছে এখানেও।
এই দুই ধাপ পেরোলেই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এ ভাবে কেউ গাড়ি চালানো জানেন কি না, তা কি আদৌ বোঝা সম্ভব? পরিবহণ-কর্তারা মানছেন, বোঝা সহজ নয়। তাঁরা তাই শনিবারের ক্যানাল স্ট্রিটের দুর্ঘটনার পিছনে পরীক্ষা-পদ্ধতিকে দায়ী করছেন। শনিবার ক্যানাল স্ট্রিটে গাড়ি আগুপিছু করে গ্যারাজে ঢোকাতে গিয়ে এক তরুণী পিষে দেন শুভমকে। এক পরিবহণ কর্তার কথায়, “আগে পরীক্ষার্থী না এসেই লাইসেন্স পেয়ে যেতেন। ছবি তোলা বাধ্যতামূলক করে তা অনেকটাই বন্ধ করা গিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার পদ্ধতিতে বহু গলদ রয়েই গিয়েছে।” সঙ্গে মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলির সঙ্গে যোগসাজশ তো আছেই। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে মোটর ট্রেনিং স্কুল চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহর। তিনি বলেন, “সাধারণত মেয়েদের হাতে দুর্ঘটনা কিন্তু খুব কম হয়। তবে যত দিন যাচ্ছে, ইনস্পেক্টর বা পরীক্ষকের সংখ্যাও ক্রমশ কমছে। ঠিকমতো না পরীক্ষা করে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।”
লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি যে আছে, তা মানছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। বলেন, “এখনকার জায়গায় ঠিকঠাক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভবই নয়। তাই রুবিতে নতুন অফিস তৈরি হলে লাইসেন্স দেওয়ার বিভাগটি ওখানে সরিয়ে নিয়ে যাব। ওখানে বহু ফাঁকা রাস্তা আছে।”
মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলিরও গাফিলতি আছে বলে মনে করেন মন্ত্রী। তাঁর মতে, “বেসরকারি মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলি সব সময়ে ঠিকমতো শেখায় না। সেই কারণে আমি সরকারি মোটর ট্রেনিং স্কুল খোলারই পক্ষপাতী।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.