স্বামী হারিয়ে সত্তর বছর আগে পাড়ি দিয়েছিলেন বৃন্দাবনে। দেবতাকে আশ্রয় করে। সেই তাঁর প্রথম বাংলা ছেড়ে যাওয়া।
২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর আবার তিনি পা রাখলেন কলকাতার মাটিতে। হাঁটতে পারেন না। কানে ঠিকঠাক শুনতেও পান না। দৃষ্টিশক্তিও আর আগের মতো নেই। তবু কলকাতার পুজোয় যোগ দেওয়ার সুযোগ
ছাড়তে পারেননি একদা মেদিনীপুর-নিবাসী শতায়ু ললিতা অধিকারী। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম পুজোর বাংলায়, কলকাতায়।
ললিতাদেবী একা নন, ৫২ জনের দলে অনেকেরই বয়স সত্তর পেরিয়েছে। কলকাতায় পুজো দেখার জন্য বারাসতের একটি ক্লাবের আমন্ত্রণ ফেরাতে পারেননি তাঁরা। রবিবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে পা রেখেই থ মেরে গিয়েছিলেন |
বাংলায় ফেরা। বিমানবন্দরে বৃদ্ধারা। ছবি: সুমন বল্লভ। |
তাঁদের প্রায় সকলেই। ছিল বিমানযাত্রার ধকলও। কোনও ভাবে বিমানবন্দরের বাইরে আনা হল তাঁদের। বেজে উঠল উদ্যোক্তাদের আনা ঢাক। ঢাকের আওয়াজ কানে যেতেই যেন সম্বিৎ ফিরে পেলেন বৃদ্ধারা। জোর ফিরে এল পায়ে। পা মেলালেন ঢাকের তালে তালে। বারাসতের একটি ক্লাবের কিছু প্রতিনিধি সম্প্রতি বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছেই কলকাতার পুজো দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ললিতাদেবীরা।
ওই ক্লাবেরই উদ্যোগে এয়ার ইন্ডিয়া ৫২ জন বৃদ্ধার টিকিটের দাম নেয়নি। বৃদ্ধাদের দলটিকে প্রথমে ট্রেনে দিল্লি নিয়ে যান উদ্যোক্তারা। দিল্লি থেকে তাঁরা এ দিন কলকাতায় এসে পৌঁছন। বিকেল সওয়া ৪টেয় কলকাতার মাটি ছুঁল বিমান। নেমে এলেন বৃদ্ধারা। পরনে সাদা থান। কপালে তিলক। এক হাতে রুদ্রাক্ষের মালা, অন্য হাতে পুঁটুলি। উদ্যোক্তারা বাইরে নিয়ে এলেন তাঁদের। শুরু হল ঢাকের তালে নাচ। কয়েক মিনিট বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তাও থেমে গিয়েছিল। অনেকেই খানিক দাঁড়িয়ে দেখছিলেন তাঁদের।
মহানগরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে ওই বৃদ্ধাদের। ১৩ অক্টোবর তাঁদের বৃন্দাবনে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। এ দিন যখন তাঁরা বিমানবন্দর ছাড়লেন, সকলের চোখে জল।
বাংলায় ফেরার আনন্দাশ্রু। |