ঢাকে পড়ল কাঠি
পটচিত্রে-পুরাণে দুর্গার সংসারের গল্প
খিল বিমানে, তব জয়গানে...
সারারাত ধরে রেডিওটা বাজছে, রোজের মতোই। মহালয়ার পার্থক্য শুধু এটাই, এ দিন পাড়ার অন্য বাড়িতেও ভোর থেকে রেডিও চলে। অবশ্য পুরনো পাড়ার লোকেদের কারও জানতে বাকি নেই, বছর চল্লিশের নদী একটু ‘অন্য রকম’। সাইকিয়াট্রিস্ট বলেন, ও নাকি ‘বর্ডারলাইনে’। ওষুধ ঠিকঠাক খেলে ভাল থাকে। কিন্তু এক বার রেগে গেলেই সব পণ্ড...
৯ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নদী। সকলের আদরের। কিন্তু ক্লাস এইটের পর থেকেই কেমন যেন সব পাল্টে গেল। আর পড়াশোনা হল না, কলেজে যাওয়া হল না। বসা হল না বিয়ের পিঁড়িতেও। না পাওয়ার সেই কষ্টগুলোই তো কুরে কুরে খায় ওকে। যে দিন গ্লাস ছুড়ে ও ছোড়দির মাথা ফাটিয়েছিল, তখনও এমন কোনও কষ্টই বুকটাকে পুড়িয়ে খাক করছিল। কিন্তু এক-একটা ভুল করে রাত্তিরে বিছানায় মুখ গুঁজে খুব কাঁদে নদী। তখনই মনে পড়ে যায় ভালদার কথা। ওই তো সবচেয়ে বেশি বুঝত নদীকে। ২৪ বছর বয়সে অফিস পিকনিকে গিয়ে জলে ডুবে বেমক্কা মরেই গেল ছেলেটা। এখনও মহালয়ার পরের এই সময়টায় ভালদার কথা ভেবে বুকের মধ্যেটা উথালপাথাল করে।
ভালদার হাত ধরেই ছোটবেলায় টুকুটুক করে ঠাকুর দেখতে যেত। পা-টা তো চিরকালই কমজোরি। এখন তো খবরের কাগজই সব জানিয়ে দেয়। নদী কাগজে পড়েছে, বোসপুকুর শীতলামন্দিরের পুজোয় এ বার থাকছে বামন ও বলি-র সেই গল্প। ভালদা বলত, পঞ্চম অবতার বামনই প্রথম নররূপী নারায়ণ। বলির দর্প চূর্ণ করতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন ভাগে পা রেখেছিলেন তিনি। শীতলামন্দিরের মণ্ডপ সেজে উঠবে সেই পায়ের খড়মের বিশাল প্রতিরূপ দিয়ে। মণ্ডপটা একটা গ্লোব। তার উপরে ১০ ফুটের খড়ম। খড়মেই খোদাই করা দশাবতারের ছবি। বিরাট বারকোশের উপরে খোদাই করা কাঠের প্রতিমা। কাজ করছেন হলদিয়ার শিল্পীরা।হাজরা ২২ পল্লি-র পুজোয় শিব-দুর্গার সংসার। মেদিনীপুরের শিল্পীদের তৈরি পটচিত্রেই শিবমন্দিরের আদলে সেজে উঠবে মণ্ডপ। রাজপুরের গাজিপুর সর্বজনীন নিয়ে আসছে বাহা পরব। ভাদ্র সংক্রান্তিতে বোনা ধানের বীজের ফসল ওঠে পৌষে। তখনই হয় বাহা। বড়িশা ইউথ ক্লাব পুজোয় ফিরিয়ে আনছে হারিয়ে যাওয়া সময়ের সেই সার্কাসকে। বেহালার সম্মিলিত জয়রামপুর সর্বজনীন নতুন-পুরনো হরেক কিসিমের পুতুল দিয়ে সাজাবে মণ্ডপ।
বরাহনগর ফ্রেন্ডস্ অ্যাসোসিয়েশনে এ বার বৌদ্ধ প্যাগোডার আদলে মণ্ডপ। গাছের ফল যেমন প্রকৃতির দান, তেমনই মানুষের সব কাজের পিছনেই আশা থাকে ফলের। সেই দর্শনই ফুটে উঠবে। ৩ নম্বর চ্যাটার্জি কলোনি পুজোকমিটি-র থিম ‘মোহ’। সেই মোহকে রৈখিক রূপ দেওয়া হবে মণ্ডপে। ৬০ ও ৬১ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটানো বুড়োবুড়িদের জীবন তুলে আনবে মণ্ডপে।
নন্দীবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপে উঠে আসবে একটুকরো দেবাঙ্গন। মণ্ডপসজ্জায় ভারতের নানা অঞ্চলের স্থাপত্যকীর্তি।
ভবানীপুরের অগ্রদূত উদয় সঙ্ঘ আবার বেছে নিয়েছে বন্যপ্রাণী সচেতনতাকে। মণ্ডপ সাজছে বিভিন্ন আকারের সাপ দিয়ে। প্রবেশপথে মডেলের মাধ্যমে মনসা এবং চাঁদ সদাগরের কাহিনি।
সল্টলেক এইচ বি ব্লকে দেখা যাবে সরার আলোতে রামধনু। সরায় ফুটে উঠবে ধনপতি সওদাগর, কমলে কামিনীর কাহিনি ও দক্ষযজ্ঞ। যাঁরা সরায় এঁকেছেন, তাঁরাই পড়বেন পাঁচালি। সল্টলেকেরই আর এক পুজো, আইএ ব্লক সর্বজনীনে প্রাচীন ভারতের মন্দির। মণ্ডপে লোককথার মাধ্যমে দুর্গা-বন্দনা।
পদ্মপুকুর বারোয়ারি সমিতির পুজো গ্রামবাংলা নিয়ে। থাকবে বাঁকুড়ার ঘোড়া, ছো-র মুখোশ, ডোকরার কাজ। মধ্য কলকাতা উত্তরণের থিম শব্দব্রহ্ম অর্থাৎ ওঁ। শব্দব্রহ্মের মাহাত্ম্য বোঝাতে ব্যবহার হবে ৬ ইঞ্চি থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত মাপের ৭৫০টি কান। থাকবে যাত্রায় ব্যবহৃত ৯০০টি চোঙ। মণ্ডপের দু’দিকের দেওয়ালে আলো-ছায়ার কারসাজিতে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হবে যে মনে হবে সারে সারে কান যেন দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে।
বয়সও বাড়ছে, পায়ের জোর আরও কমছে। এখন আর পাড়ার ঠাকুরটারও মুখ দেখতে যাওয়া হয় না। তবুও পুজোর দিনগুলোয় যখন মাইকে গান বাজে বা সপ্তমীর সকালে হঠাৎ দিদিভাই নতুন শাড়ি নিয়ে এসে ঘণ্টাখানেক গল্প করে যায়, মনটা খুশি-খুশি হয়ে ওঠে নদী-র। সারা দিনটা ধরে ও গুনগুন করতে থাকে, রূপং দেহি, ধনং দেহি, যশো দেহি...
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.