আকাশের মুখে হাসি, দিনভর পুজো-প্রস্তুতি জোরকদমে
কাশের ঝমঝমে মেজাজ দেখে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। প্রতিপদের সন্ধ্যায় পুজো উদ্বোধনপর্বে বলেও ফেললেন, “এ বার বৃষ্টিটা থামিয়ে দাও মা! মা গো, আর যেন বৃষ্টি না হয়!” পুজোর আগে শেষ রবিবার, দ্বিতীয়ার সন্ধ্যায় দেখা গেল, পুজোকর্তা, শিল্পী থেকে আমজনতা সকলেই খানিকটা ফুরফুরে মেজাজে।
এ দিন বিকেলে মেঘমুক্ত আকাশের দক্ষিণ কলকাতায় কয়েকটি পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সহাস্যে বলেন, “একটু-আধটু বৃষ্টি হবে, ঠান্ডা-ঠান্ডা পরিবেশ থাকবে, লোকে ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়া করবে, শরীর-স্বাস্থ্যও ঠান্ডা থাকবে, সে তো ভালই! কিন্তু অমন বৃষ্টি যেন না হয়!” বাস্তবিক, পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার প্রাক্-মুহূর্তে বৃষ্টি-অসুরের দাপট থেকে এই দিনটায় অন্তত অনেকটাই রেহাই মিলেছে। দক্ষিণ কলকাতার উপকণ্ঠে দুপুরের দিকটায় হাল্কা বৃষ্টি, বিকেলে মেঘের ভ্রূকুটি এ সব অবশ্য ছিলই। তবু বৃষ্টি বড় রকমের অত্যাচার করেনি। তাতে পড়ে থাকা কাজ অনেকটাই সামলে নিয়েছে ছোট-বড় পুজো।
টইটম্বুর ধর্মতলা চত্বর। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ইতিমধ্যে উদ্বোধন হয়ে যাওয়া পুজোতেও দিনভর পড়ে থেকে বৃষ্টির ‘ড্যামেজ-কন্ট্রোল’ করতে হয়েছে শিল্পীকে। আকাশ খটখটে দেখে সকালে এসেই যোধপুর ৯৫ পল্লির মণ্ডপের মাথায় উঠে ত্রুটি সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন সনাতন দিন্দা। অনুকূল আবহাওয়ায় ডেকরেটরের পরিকল্পনার গলদ শুধরোনো থেকে শুরু করে আবহসঙ্গীতের বিন্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও সারতে হয়েছে। বড়িশা ক্লাবের পুজোয় মাটির ১২ ফুটি শিব-সতী এতদিন প্লাস্টিক মুড়ি দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। খটখটে রোদে এ দিন তাঁরা আত্মপ্রকাশ করেছেন।
রোদ দেখে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববির আহ্লাদও ধরে না! চেতলা অগ্রণীর পুজোয় জল-কাদার ভয়ে মণ্ডপের বাইরে সিমেন্টের চৌখুপি পাত বসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। দুপুরে দেখা গেল, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ববি হাঁকছেন, “কখন বৃষ্টি আসে ঠিক নেই, এই বেলা দোহাই কাজটা সামলে দে! তোদের দু’হাজার টাকা দেব।”
আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও মনে করতে পারছেন না, পুজোর ঠিক আগে শেষবার কবে এমন নাগাড়ে বৃষ্টি চলেছে। খাতায়-কলমে বর্ষা বিদায় নেবে ৮ অক্টোবর। শেষবেলায় তার খেল দেখানোটা তাই আশ্চর্য কিছু নয়। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আগেও এমন হয়েছে। পুজো আর ক’দিন পরে হলে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু এ বার যাকে বলে শিরে সংক্রান্তি! অরূপের পুজো সুরুচি সঙ্ঘেও সকাল থেকে মণ্ডপের মাথার পলিথিন সরিয়ে এক-একটা অংশ খুঁটিয়ে দেখা, মেরামতির কাজ চলছে। তৃতীয়ার সকালে অনেকটা কাজই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে মনে করছেন পুজোকর্তারা।
উল্টোডাঙার তেলেঙ্গাবাগানের শিল্পী কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত বলছিলেন, “এখনও পর্যন্ত যা কাজ হয়েছে, তার সিকিভাগই এই রবিবারের বৃষ্টিবিহীন দিনে সারা।” আগের রাতটা জাগার পরেও অনেক শিল্পীই এতদিন বাদে ভাল আবহাওয়া পেয়ে সকালটা গড়িয়ে নেওয়ার বিলাসিতা দেখাননি। সল্টলেকের এ ই ব্লকের একটি পুজোয় মণ্ডপের গায়ে পোড়ামাটির ভাব ফুটিয়ে তুলতে এতদিন প্রাণান্তকর দশা হচ্ছিল শিল্পীদের। চার বারের চেষ্টায় এ দিন রং করা শেষ হয়েছে। কুমোরটুলির শিল্পীরাও বাকি থাকা কাজের অনেকটাই সেরে ফেলেছেন এ দিন।
তবে বৃষ্টির ধাক্কায় পুজোর বাজেট বেড়ে যাওয়া নিয়ে পুজোকর্তাদের দুঃখ সহজে যাওয়ার নয়। কাশী বোস লেনের সোমেন দত্ত হিসেব কষলেন, তাঁদের ‘কাশবনে’র শোভা অটুট রাখতে ৭০-৭৫ হাজার টাকা বাজেট বেড়েছে। কেউ মণ্ডপের সামনে কাদাজল রুখতে সিমেন্ট বসিয়েছেন। জল লাগলে ক্ষতি হবে না, এমন দামি আলো খুঁজে আনতে শেষবেলায় ফের বাজারে ছুটতে হয়েছে অনেক কর্মকর্তাকেই।
তবে বৃষ্টিবিহীন দিনটায় সব থেকে খুশি হয়েছে পুজোর বাজার করতে আসা জনগণ। লিন্ডসে স্ট্রিটের জুতোর দোকানে ভিড় শুরু হয়েছিল সকাল ১০টা থেকেই। শুধু কলকাতা বা কাছের মফস্সল নয়, মালদহ থেকেও একটি পরিবার হাজির সবার পছন্দের জুতো কিনতে। দুপুরে জওহরলাল নেহরু রোডের একটা দিকের অর্ধেক দখল করল ফুটপাথ থেকে উপচে পড়া জনতা। পুলিশ ব্যারিকেড সাজিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একটু পরেই ভিড়ের চোটে সেই ব্যারিকেড হাওয়া। গড়িয়াহাট, হাতিবাগানেও একই ছবি। পুজোপাগলদের মাতামাতিই বুঝিয়ে দিয়েছে, সময় পাল্টালেও পুজোর শেষ রবিবারের ছবিটা এখনও একই রকম।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.