প্রণবের উপহার পেয়ে সংগ্রহশালা গড়ছে স্কুল
বেজায় খুশি হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির দীপাঞ্জন দাস আর সপ্তম শ্রেণির স্নেহাশিস সাহা। তবে শুধু দীপাঞ্জন বা স্নেহাশিসই নয়, নানুরের কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলের প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া এ বার আহ্লাদে আটখানা। না, পুজোয় বাবা-মার কাছ থেকে রংবেরঙের জামাকাপড় পাওয়ার আনন্দ নয়। এক ‘দাদা’-র কাছ থেকে এই প্রথম অন্য রকমের এক উপহার পাওয়ার খুশিতে ভরপুর গোটা স্কুল। কারণ, এ দাদা যে স্বয়ং দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশে অনুষ্ঠানগুলিতে পাওয়া নানা স্মারক স্কুলকে দান করেছেন প্রণববাবু। ওই সব স্মারক নিয়েই স্কুলে তৈরি হয়েছে একটি সংগ্রহশালা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীর দিন প্রণববাবুর হাত দিয়েই ওই সংগ্রহশালার উদ্বোধন হবে। আর তার অপেক্ষাতেই স্কুলে এখন সাজো সাজো রব।
রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৯৫ সালে কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই স্কুল থেকে প্রণববাবুর মিরাটি গ্রামের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ১৯৪৬ সালে ওই স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ‘পল্টু’ (প্রণববাবুর ডাকনাম)। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। রাজনীতির ময়দানের দৌড়ে প্রণববাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। কিন্তু ছোটবেলার স্কুলটিকে ভুলতে পারেননি। অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজের স্কুলে এসেছেন। স্মৃতিচারণে ধরা পড়েছে স্কুল দিনের কথা। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, সে সময়ে স্কুলে আসার কোনও রাস্তা ছিল না। আলপথে হেঁটে স্কুলে পৌঁছতেন। বর্ষার সময়ে জলকাদা ভর্তি সেই পথে গামছা পড়ে স্কুলের ব্যাগ আর পোশাক মাথার উপরে তুলে স্কুলে যেতেন। কীর্ণাহারে এক বন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পোশার পাল্টে স্কুলে ঢুকতেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও এই চরম ব্যস্ততার মাঝেও ছোটবেলার সেই স্কুলকে ভোলেননি প্রণববাবু। পুজোর বাড়ি এসে গত বছরও স্কুলে এসেছিলেন। সেই সময়েই স্কুল কর্তৃপক্ষের আগ্রহে ওই সংগ্রহশালার জন্য তার বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত স্মারক দান করার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই জন্য ইতিমধ্যেই স্কুলে এসে পৌঁছেছে বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া ৩৮টি স্মারক। যার মধ্যে রয়েছে ২০১০ সালে কলকাতার মমরাজ অগ্রবাল ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া একটি তাম্রফলক। রয়েছে ২০০৩ সালে নয়া দিল্লির একটি সংস্থার থেকে পাওয়া কাঁচের বাক্সের ভেতরে রাখা জাতীয় পতাকার সুদৃশ্য স্মারক। এ ছাড়া আছে ২০০৬ সালে একটি মার্কিন সংস্থার থেকে পাওয়া স্মারকও। তবে শুধু এমন স্মারকও নয়, রয়েছে প্রণববাবুর ব্যক্তিগত স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু সামগ্রীও। যার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য প্রণববাবুর বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়, দাদা এবং প্রণববাবুর নিজের স্কুলে ভর্তির নথি ও হাজিরা খাতা। থাকছে বিভিন্ন সময়ে স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রণববাবুর নানা দুষ্প্রাপ্য ফোটোগ্রাফও। এমনকী সংগ্রহশালায় ঠাঁই পেয়েছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রণববাবু স্কুলে এসে যে চেয়ারটিতে বসেছিলেন, যে কলমটিতে সই দিয়েছিলেন সে দু’টিও। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আরও কিছু মোমেন্টো এবং প্রণববাবুর ব্যবহার করা জিনিস সংগ্রহশালায় এসে পৌঁছনোর কথা। সেগুলি পেলে একটি পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহশালা গড়ে উঠবে।”
উদ্বোধনের কয়েক দিনের মধ্যেই সংগ্রহশালাটি সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রণবানন্দ দাস। আর নবম শ্রেণির অর্পণ পাল, দ্বাদশ শ্রেণির সায়ন সাহারা বলছে, “স্কুলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রাক্তন ছাত্রদের আমরা ‘দাদা’ সম্বোধন করি। কিন্তু উনি (প্রণববাবু) দেশের রাষ্ট্রপতি! সামনা সামনা তাঁকে দাদা ডাকতে না পারলেও স্কুলের রীতি অনুযায়ী তিনি তো আমাদের দাদাই। এ বার পুজোয় সেই দাদার এমন অভিনব উপহার, নতুন জামাপ্যান্ট পাওয়ার আনন্দকেও ছাপিয়ে দিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.