সম্মান তো জোটেই। তার সঙ্গে প্রচুর অর্থও। কিন্তু পুরস্কার প্রাপকরা সেই অর্থ নিয়ে কী করেন?
কথা হচ্ছে নোবেল পুরস্কার নিয়ে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নজির সৃষ্টি করেন যাঁরা, দেখা যাচ্ছে তাঁদের কেউ নিজেদের শখ মেটাতে নানা ভাবে ব্যয় করেন পুরস্কারের অর্থমূল্য। কেউ আবার সবটাই দান করে দেন সামাজিক কাজে। কী রকম?
১৯২০ সালে নোবেল জিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন নাকি পুরো অর্থই রেখে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে। যাতে সুদ-সমেত আরও বেশি অর্থ ফেরত পান। তিনি চিন্তিত ছিলেন অবসরের পরে কী হবে, তা নিয়ে। কারণ একটি জীবনী থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই সময়ে প্রেসিডেন্টরা সরকারি পেনশন পেতেন না।
তারও সাত বছর আগে নোবেল পেয়ে দুনিয়ায় হইহই ফেলে দিয়েছিলেন যিনি, সেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী করেছিলেন? শোনা যায়, সেই সময়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর পরিকল্পনা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন কবি। কিন্তু অর্থাভাবে অনেক কাজ থমকে গিয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা চলছিল সেই অর্থাভাব প্রসঙ্গে। তার মধ্যেই এসে পৌঁছেছিল নোবেল পুরস্কারের অর্থ। বিশ্বকবি তখন নাকি খানিক পরিহাসের সুরেই বলেন, যাক, নর্দমা তৈরির টাকা চলে এল!
মাদার টেরিজা, বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো শান্তি নোবেল প্রাপকরা পুরো অর্থই দান করে দিয়েছেন সেবার কাজে। অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার পরে অমর্ত্য সেন সেই টাকা দিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশে তৈরি করেন প্রতীচী ট্রাস্ট।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নোবেলের অর্থ পুরস্কার কমেছে বেড়েছে। বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দাও তার একটা বড় কারণ। কিন্তু সেই টাকা নিয়ে শখ পূরণের গল্পগুলো বেশ মজার। ২০০১ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন পল নার্স। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে নিজের মোটরবাইক আরও উন্নত করে নেন তিনি! ১৯৯৩ সালে আর এক নোবেল বিজেতা রিচার্ড রবার্টস নিজের বাড়ির সামনে লন তৈরি করে ফেলেছিলেন সেই অর্থে।
সোমবার থেকে আবার নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পালা। তার আগে নোবেল ফাউন্ডেশনের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর লার্স হাইকেস্টেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুরস্কার প্রাপকরা কী ভাবে টাকা খরচ করেন? তিনি বলেন, “কোন দেশের মানুষ তাঁরা, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। তাঁরা কী করেন, এবং তাঁদের রোজগার কেমন, তার উপরেও অর্থ খরচের প্রবণতা নির্ভর করে। এখন নোবেল বিজেতারা প্রায় ৭ কোটি ৬৭ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা পান। এটা এক জনের পক্ষে প্রচুর হলেও যখন কোনও ক্ষেত্রে যৌথ পুরস্কার দেওয়া হয়, তখন এই অর্থমূল্য ভাগ হয়ে যায় দুই বা তিন জনের মধ্যে। ২০০১ সালে যেমন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন তিন জন। তাঁদের এক জন উল্ফগ্যাং কেটারলি ওই অর্থ নিজের বাড়ি আর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ব্যয় করেন। যিনি নিজেই বলছেন, “আমেরিকায় অর্ধেক অর্থ শুল্ক দিতেই বেরিয়ে যায়। তাই তেমন কিছুই আর ছিল না!” ২০০৬ সালে নোবেল পান বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি দাবি করেছিলেন, পুরস্কারের অর্থে চক্ষু হাসপাতাল তৈরি করবেন। দরিদ্রদের সস্তায় খাবার দেওয়ার বন্দোবস্ত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সাহিত্যে নোবেল পান যাঁরা, কী ভাবে তাঁরা অর্থব্যয় করেন, তা জানা যায় না অনেক সময়েই। নোবেল পুরস্কার বিশেষজ্ঞ আনা গুন্ডার বলছেন, “সাধারণত দেখা যায়, যে সব বিখ্যাত লেখক নোবেল পান, তাঁরাও লিখে খুব বেশি রোজগার করেননি। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কেরিয়ার পাল্টে যায় নোবেল পাওয়ার পরে। কেউ কেউ যে বছর নোবেল পান, সে বছর আর বিশেষ লেখেন না।” |