বিয়ের মাস ছয়েকের মধ্যে এক তরুণীর ঝুলন্ত দেহ মিলল শ্বশুরবাড়িতে। মৃতার মায়ের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করেছেন শ্বশুর।
বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে শনিবারের এই ঘটনায় অভিযুক্ত হরগোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর ও জায়ের বিরুদ্ধে। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলীর স্বরডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কনস্টেবল হরগোবিন্দবাবুর ছোট ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কাটোয়ার বৈঁচি গ্রামের বছর কুড়ির মেয়েটির। স্বামী বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। বিয়ের পরে তিনি সেখানে ফিরে গেলেও তরুণী শ্বশুরবাড়িতেই থাকছিলেন। তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বিয়েতে দাবি অনুযায়ী যৌতুক দেওয়া সত্ত্বেও কিছু দিন পর থেকেই পণের দাবিতে ওই তরুণীর উপরে অত্যাচার শুরু হয়।
থানায় লিখিত অভিযোগে মৃতার মা দাবি করেছেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিতেন শ্বশুর। শনিবার দুপুরে মেয়ে ফোন করে জানান, বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে শ্বশুর তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। তার পর থেকে ফোনে আর মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তাঁরা। বিকেলে খবর পান, ঘরের সিলিং থেকে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরগোবিন্দবাবুই থানায় ফোন করে জানান, তাঁর পুত্রবধূ আত্মঘাতী হেয়েছেন। জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার লোকজন হরগোবিন্দবাবুকে আটকে রেখেছেন। বাড়ির বাকিরা পলাতক।” রাতে পূর্বস্থলী থানায় মৃতার বাপের বাড়ির তরফে লিখিত অভিযোগ হয়। পুলিশ হরগোবিন্দবাবুকে গ্রেফতার করে। ওই রাতেই বধূর দেহ প্রথমে কালনা মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার ডাক্তারি পরীক্ষা ও ময়না-তদন্তের জন্য দেহ বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। রবিবারই কালনা আদালতে পুলিশ ধৃতের ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর অনুমতি চায়। আদালতে তা মঞ্জুর করে। পুলিশ জানায়, সেই পরীক্ষার পরে সোমবার ধৃতকে আদালতে তোলা হবে।
ঘটনার পর থেকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ওই তরুণীর মা। মৃতার বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “শ্বশুর সব সময় আমার মেয়েকে খারাপ নজরে দেখত। জামাই বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিতে চাইত।” মৃতার কাকার দাবি, “কুপ্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য ভাইঝিকে টাকার লোভও দেখাতেন হরগোবিন্দবাবু। ভাইঝি নিজের মুখে সমস্ত কিছু মোবাইলে রেকর্ড করে গিয়েছে। আমাদের কাছে তা রয়েছে। সেটি পুলিশকে দেব।” মৃতার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |