মহার্ঘ কাঠ, তাই প্লাস্টিক পুড়িয়েই রান্না শ্রমিকদের
বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে সমস্যাটা। ফলতা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্লাস্টিক কারখানাগুলি থেকে বর্জ্য প্লাস্টিক ও বর্জ্য জৈব অবশেষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। সেই জ্বালানিতেই চলছে হাঁড়ি। পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, এই ভাবে প্লাস্টিক পুড়িয়ে রান্না করায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো হচ্ছেই। তার সঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে এলাকার পরিবেশেরও।
ফলতা এসইজেড অঞ্চলে ঢুকতেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশে রাখা নোংরা প্লাস্টিকের স্তূপ। জৈব রাসায়নিকে পূর্ণ বর্জ্য-সহ প্লাস্টিকের সব চেয়ে ক্ষতিকর অংশ, কী নেই তাতে?
ফলতার প্লাস্টিক কারখানাগুলিতে মূলত প্লাস্টিকের দানা বা ক্রিস্টাল তৈরি হয়। তার জন্য ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পাত্রে করে ঢোকানো হয় মিলে। তার মধ্যে সব রকম বর্জ্যই থাকে। মিলের ভিতরে তার প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। সেখানে খালি হাতেই কাজ করেন শ্রমিকেরা। প্রক্রিয়াকরণের পর যে বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়, তা-ই জ্বালানি হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয় শ্রমিকদের। তাতে থাকে বিষাক্ত পেট্রোকেমিক্যাল, হাসপাতালের ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ সবই।
শ্রমিক অধিকার কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, প্লাস্টিক কারখানায় পাঁচ-ছ’ পাত্র প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণের জন্য ঢুকলে, তার থেকে এক পাত্র প্লাস্টিক বেরোয় বর্জ্য হিসেবে। তাই বাড়ি নিয়ে গিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন শ্রমিকেরা।
চিকিৎসক সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “প্রথমত প্লাস্টিক পোড়ানোই বেআইনি। প্লাস্টিক নষ্ট করার কিছু বিধি আছে। ফলতার শ্রমিকেরা এ ভাবে বর্জ্য প্লাস্টিক বাড়ি নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করছেন বলে শুনেছি। এতে স্বাস্থ্যের অত্যন্ত ক্ষতি হয়। প্লাস্টিক পোড়ালে ডাই-অক্সিন বলে একটা গ্যাস বেরোয়। তার প্রভাবে ফুসফুস, কিডনির নানারকম রোগ হতে পারে। বাতাসে ১০ লক্ষ ভাগের তিন বা চার ভাগও যদি ডাই-অক্সিন থাকলে মৃত্যুও হতে পারে। লতার এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে কাজ করেন যে শ্রমিকেরা, তাদের বেশিরভাগকেই ১০-১২ ঘণ্টা প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল ঘেঁটে কাজ করতে হয়। সামান্য গ্লাভ্সও অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। সেই ক্যেমিকাল শরীরে লাগলে নানা রকম সংক্রমণ হতে পারে।” রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের রসায়ন প্রযুক্তির প্রাক্তন অধ্যাপক রবীন মজুমদারও জানান, প্লাস্টিকের মধ্যে নানারকম ভাগ রয়েছে। তবে পোড়ালে যে গ্যাস বেরোয় হবে, তা কিন্তু সবসময়েই ক্ষতিকারক।
প্লাস্টিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তা জানেন শ্রমিকেরাও। কিন্তু জ্বালানি কাঠের দাম অনেক বেশি। প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। ফলতা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্লাস্টিক কোম্পানিগুলোতে ১৬০-১৭০ টাকা রোজে কাজ করেন শ্রমিকেরা। তাই বিনা পয়সায় পাওয়া জ্বালানি প্লাস্টিকই তাদের কাছে দিনের সাশ্রয়।
হাইল্যান্ড গ্রামের আসমানি খাতুন কাজ করেন প্লাস্টিক কারখানায়। জ্বালানি হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করেন কি না জানতে চাইলে প্রথমে স্বীকার করতে চাননি। কিন্তু মাটির ঘরের পাশেই চিকচিক করতে দেখা যায় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের চিকচিকি। বললেন, “এখন প্লাস্টিক নিয়ে মিল থেকে বেরোনোর পাস দেয় না সামনাসামনি। তবে আমরা চেয়ে আনলে কিছু বলেও না। আমরা জানি, এতে শরীরের ক্ষতি হয়। কিন্তু কাঠ কেনার পিছনে যে টাকা খরচ করতে হয়, তা অনেকটা বাঁচে।”
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির অধ্যাপক তুষার চক্রবর্তী বলেন, “এই প্লাস্টিক যে দয়া করে শ্রমিকদের দিয়ে দেওয়া হয়, তা নয়। এই প্লাস্টিক নষ্ট করার যে পরিকাঠামো প্রয়োজন ও তা যতটা খরচসাপেক্ষ, অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষই তা বহন করতে নারাজ। প্লাস্টিক দিয়ে মাটি ভরাট করতে হলে তার জন্যও অনুমতি নিতে হয়। সেই কারণে, শ্রমিকদের এই বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে দিলে সেই দায়টা কারখানার মালিকের আর থাকে না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.