মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি সারাদিন, ছাতা নিয়েই চলছে কেনাকাটা
শ্বিনের মেঘ-মেদুরতায় উবে গিয়েছে উৎসবের আমেজ।
কুমোরপাড়ায় থমকে গিয়েছে তুলির টান। ত্রিপলের আড়ালে প্রতিমার মুখ এখনও ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে। দিনভর বৃষ্টিতে টান পড়েছে ম্যারাপ বাঁধার কাজও। বাজারও হারিয়েছে চেনা ভিড়।
গত ক’দিন ধরে টানা বৃষ্টি তাড়া করে বেড়াচ্ছে কলকাতা-সহ তামাম দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে। বাদ সেধেছে প্রতিমা শুকোনোর কাজ। মহালয়ার পরেও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় তাই উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রতিমা শিল্পী থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের মুখেও। বর্ধমান শহরের মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন, অনেক প্রতিমা পড়ে রয়েছে যা এখনও শুকোয়নি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসার। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতিমা শুকোতে বার্নার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে খরচও বেড়ে গিয়েছে।

বৃষ্টির জেরে শুকোয়নি প্রতিমা। দেবীপক্ষ পড়লেও তাই রঙের প্রলেপ পড়েনি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
মণ্ডপের কাজও বৃষ্টির জন্য ঢিমে তালে চলছে। দুর্গাপুরের মার্কনি দক্ষিণ পল্লি পুজো কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃষ্টির জন্য মণ্ডপের বাইরের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে প্রয়োজনে রাত জেগেও কাজ করতে হচ্ছে। মণ্ডপের কাঠামোর রং এমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে বৃষ্টির জলে তা না ধুয়ে যায়।” খড়্গপুরের মালঞ্চ বিবেকানন্দ পল্লি পুজো কমিটি এ বার ঘুড়ি, পাখি, গাছ ইত্যাদি দিয়ে তাদের মণ্ডপ সাজাচ্ছে। কিন্তু সেই উদ্যোগে বাদ সেধেছে সাম্প্রতিক নিম্নচাপের জেরে চলা নাগাড়ে বৃষ্টি। পুজোর উদ্যোক্তা অমিত হালদারের আশঙ্কা, “বৃষ্টির জন্য মণ্ডপের কোনও কাজই করা যাচ্ছে না। পুজোর আগে বাকি কাজ আদৌ শেষ করতে পারব কি না, সেই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।” মেদিনীপুরের খাপ্রের বাজার উন্নয়ন কমিটির পক্ষে সঞ্জিত ভকত বলেন, “থার্মোকল দিয়ে প্যাগোডার আদলে পুজো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু, যা বৃষ্টি চলছে, তাতে কাজ এগোবে কী করে!” বীরভূম জেলার অনেক পুজো উদ্যোক্তা আবার বাড়তি ছাউনি জোগাড় করতে নেমেছেন।
পুজোর আগে শেষ শনিবারও বৃষ্টি রেহাই দিল না ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। হা-হুতাশ দু’তরফেই। শনিবার দুপুর থেকে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে বসিরহাটে। বেশ কিছু দিন ধরেই এমন বৃষ্টি চলায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। বসিরহাটের কাপড় ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঢালি, রাজা অধিকারী বলেন, “অন্য বছর গ্রাম থেকে যত ক্রেতা আসেন, এ বার এখনও তাঁদের দেখা নেই। রাস্তায় জল জমায় বাড়ি থেকে অনেকে বের হতে পারছেন না।” ক্যানিংয়ের গোলকুঠিপাড়ার ইন্দ্রাণী মণ্ডল, সোনালি রায় জানান, বাড়ি থেকে তাঁরা দল বেঁধে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই বৃষ্টি নামায়, তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। স্থানীয় ব্যবসায়ী অমল পাল বলেন, “বারবার বৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসার বেশ ক্ষতি হচ্ছে।”

কখন নামে বৃষ্টি, তার ঠিক নেই। সতর্ক শিল্পী। বাঁকুড়ায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল বীরভূমেও। সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটে দিনভর ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। বিকেল গড়াতেই তা ভারি হয়। ফলে পুজোর বাজারমুখো ভিড় হাল্কা হতে থাকে। রামপুরহাট বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মহম্মদ শরিফুদ্দিন বলেন, “বৃষ্টির জন্য বাজারে বেশ প্রভাব পড়েছে। বিক্রির হার অনেকটাই কমে গিয়েছে।” বাঁকুড়া শহরে দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি নামে সন্ধ্যায়। তাই গাঁ-গঞ্জের লোকজন এ দিন বিকেল পর্যন্ত শহরে এসে বাজার করতে পেরেছেন। কিন্তু সন্ধ্যায় বাজারে বের হবেন বলে যাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন, বাঁকুড়া শহরের সেই সব বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। অনেকে ব্যাজার মুখে ছাতা মাথায় বাজারমুখো হন। পুরুলিয়া শহরেও সন্ধ্যায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামে। তবে রঘুনাথপুরে বৃষ্টির তেজ ছিল তুলনায় বেশি। বৃষ্টির মধ্যেও অনেককে বাজার করতে দেখা যায়। বৃষ্টি সত্ত্বেও কেনাকাটা করতে বেরোনো মানুষের উৎসাহে খামতি ছিল না দুর্গাপুরে। এখানকার স্টেশন বাজারে শাড়ির দোকান রয়েছে সন্তোষ সরাইয়ার। তিনি বলেন, “বৃষ্টির জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি থামলেই মানুষজন ছাতা, বর্ষাতি নিয়ে বাজার করতে আসছেন।”
কলকাতার নিউ মার্কেটের এক কাপড় ব্যবসায়ীর কথায়, “এ বার বাজার ভাল ছিল। ক্রেতার ভিড়ও ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সব মাটি হয়ে গেল।” এক জুতোর দোকানের মালিকের আক্ষেপ, “জুতো কেনার জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য অনেকেই চলে গিয়েছেন।”

এই সংক্রান্ত আরও খবর...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.