|
|
|
|
অসুর নয়, জঙ্গি দমনে শাড়ি ছেড়ে পাছরায় দুর্গা |
আশিস বসু • আগরতলা |
এক সময়ে জঙ্গিদের কালাশনিকভের গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠত মান্দাই, খোয়াই। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এই সব উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় দেবী দুর্গার উপরেও নেমে এসেছিল জঙ্গি বিধিনিষেধের খাঁড়া। সেই ‘মা’ সে দিন তাঁর দুই ‘মেয়েকে’ নিয়ে জঙ্গি মোকাবিলায় শাড়ি ছেড়ে উপজাতি মহিলাদের নিজস্ব পোশাক ‘পাছরা’ পড়েছিলেন। জঙ্গিরা ফিরেছেন মূল স্রোতে। অশান্ত ত্রিপুরা শান্ত হয়েছে। কিন্তু মা আর পাছরা ছেড়ে শাড়ি পরেননি।
ত্রিপুরার মান্দাই বাজার সংলগ্ন বিডিও অফিসের পাশেই ঘটা করে প্রতি বছরের মতন এ বছরও শারদোৎসবের আয়োজন হয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি বিমল দেববর্মার কথায়, ‘‘এক সময়ে মায়ের পরনে শাড়িই থাকত। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে জঙ্গি তাণ্ডবের সময়ে পুজো করাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। তখনই আমরা দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীকে পাছরা পরাই। উপজাতি ছোঁয়ায় জঙ্গিদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছিল এই পুজো।” সাজানো হত উপজাতি অলঙ্কারেই। মান্দাইয়ের দেখানো পথেই হাঁটতে শুরু করে প্রান্তিক জনপদ খোয়াইয়ের আশারামবাড়ি, করাঙ্গিছড়া, বনবাজার ইত্যাদি অঞ্চলের পুজো কর্তারাও। এখন উপজাতি এলাকার বহু পুজোতেই পাছরার ব্যবহার খুব স্বাভাবিক। |
|
উপজাতি পোশাক পাছরায় দুর্গা। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী। |
‘পাছরা’ পরানোর অন্য এক ব্যাখ্যাও কেউ কেউ দেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, ১৯৮৯-৯০ থেকে রাজ্যে এনএলএফটি, টিএনভি’র তাণ্ডব যখন চরমে, সে সময় ত্রিপুরার উপজাতি অধ্যুাষিত এলাকায় বেশ কিছু উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হন। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই দেবী দুর্গাকে উপজাতিমুখী করে তুলতেই ‘পাছরা’ পরানোর প্রবণতা দেখা দেয়। শান্তি,
সম্প্রীতির উৎসব দুর্গোৎসবও ত্রিপুরার হিন্দু উপজাতি সংস্কৃতির একটি অংশ, উপজাতি লোকসংস্কৃতিতে এই ধারণার মান্যতা দেওয়াটাও সে সময়ে জরুরি হয়ে উঠেছিল বলে একাংশের ধারণা। পরবর্তী ক্ষেত্রে জামাতিয়া হুদার আহ্বানে ধর্মান্তরিত বহু ব্যক্তি পরে হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেন।
তবে ব্যাখ্যা যাই হোক, রাজ্যের উপজাতি মহল্লার সব দুর্গা প্রতিমার বেশ এ ভাবে বদলায়নি। খোয়াই ও মান্দাই সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় দুর্গা পুজো উপজাতি সংস্কৃতির মোড়কে সাজানো হয়েছে ন’য়ের দশকের গোড়া থেকেই। এক পুজো কমিটির সদস্য জ্যোতিষ দেববর্মার কথায়, ‘‘দু’দশক আগে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীকে পাছরা পরিয়ে পুজোর চল মান্দাইয়েই প্রথম শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও আপত্তি করেননি। উপজাতি, অ-উপজাতি—এলাকার সবাই আগ্রহ, উৎসাহ নিয়েই মন্ডপে এসে পুজোয় অংশ নেন।’’ |
|
|
|
|
|