ফের বিতর্ক।
ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই হিসেবে সুদ কমানো নিয়ে আরও এক বার কেন্দ্রের বিপরীত মেরুতে দাঁড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
শনিবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী বলেন, অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে কিছু পণ্যের জন্য (গাড়ি, দ্বিচক্রযান ও ভোগ্যপণ্য) ঋণে সুদ কমানোর যে কথা কেন্দ্র বলছে, আখেরে তা বুমেরাং হতে পারে। কারণ, কম সুদের হাতছানিতে অনেকে ওই পণ্য কিনে ফেলবেন ঠিকই। কিন্তু পরে সুদ বাড়লে, তাঁদের পক্ষে সেই ঋণ
|
কে সি চক্রবর্তী |
শোধ করা শক্ত। আর ধারের টাকা ফেরত না-পাওয়া মানে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধি। দেশের অর্থনীতির পক্ষে যা আদৌ সুখবর নয়। শুধুমাত্র সুদ কমিয়ে চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টার ফল যে কত মারাত্মক হতে পারে, তা বোঝাতে আমেরিকার উদাহরণ টানেন তিনি। মনে করিয়ে দেন, ২০০৮-এর মন্দার সূত্রপাত ওই ভুল থেকেই।
শুধু তা-ই নয়। সুদ নিয়ে নিজেদের মতামত কেন্দ্র যে ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, তা নিয়েও অসন্তুষ্ট চক্রবর্তী।
তবে সুদ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের মতের অমিল আজকের নয়। আগের গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের জমানাতেও এই টানাপোড়েন চলেছে। কারণ, তখনও বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছে কেন্দ্র। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে চড়া সুদই বজায় রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ঋণনীতিতে সুদ আরও বাড়িয়েছেন রঘুরাম রাজন।
অর্থনীতিতে টাকার জোগান বাড়াতে নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) কমানো উচিত কি না, তা নিয়েও আগে বিতর্কে জড়িয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তখন স্টেট ব্যাঙ্ক তা কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেও, নড়ানো যায়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে।
উল্লেখ্য, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। সে জন্য প্রথমে গাড়ি, দ্বিচক্রযান এবং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়াতে চায় তারা। আর তা করতেই এই সব পণ্যের জন্য কম সুদে ঋণ দেওয়ার চিন্তাভাবনা।
সম্প্রতি এ নিয়ে রাজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। জানিয়েছেন, কম সুদে ওই সব পণ্যের জন্য ঋণ দিতে প্রয়োজনে ব্যাঙ্কগুলিকে বাজেট বরাদ্দের থেকেও বেশি মূলধন জোগাবে কেন্দ্র। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ ধরনের কম সুদের ঋণ কেন জরুরি, তা বোঝানোর জন্য ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসার কথাও বলেছেন তিনি। কিন্তু এখানেই আপত্তি চক্রবর্তীর। তাঁর আশঙ্কা, আগামী দিনে এই সস্তা ঋণের মাসুল গুনতে হতে পারে দেশের অর্থনীতিকে। |