|
|
|
|
‘বদল’ প্রতিমা তৈরিতে |
অসুরের দাড়ি, দুর্গা পরেছেন নানা রঙের শাড়ি |
অনির্বাণ রায় • শিলিগুড়ি |
আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে অসুরের মুখেও’ এতদিন ছোট্ট ধুতিই অসুরের জন্য বরাদ্দ ছিল। পৌরাণিক প্রথা অনুযায়ী পুরুষদের গায়ে শুধু একটা উত্তরীয় থাকে। তবে অসুরের গায়ে সেই উত্তরীয়ও খুব একটা দেখা যায় না। বেশ একটা পাকানো গোঁফ অসুরের ট্রেডমার্ক। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে যত্নে রাখা
ফ্রেঞ্চকাট দাড়িও।
শিলিগুড়ির কুমোরটুলির পুষ্পরঞ্জন পালের স্টুডিও দেখা গেল। ফ্রেঞ্চকাটধারী অসুরকোনও থিমের প্রতিমা নয়। সাবেকি ধাঁচের ডাকের সাজের প্রতিমা। তবে ফ্রেঞ্চকাট কেন। শিল্পী পুষ্পরঞ্জনবাবুর উত্তর,“কেন অসুর বলে কি দাড়িগোঁফেরও যত্ন করাও বারণ? অসুরের যে পাকানো গোঁফ দেখা যায়, তা কিন্তু নিয়মিত যত্ন না করলে হয় না। তাই আমার অসুরকে এবার ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি দিয়েছি। তাতে ‘লুক’ টা একটু পাল্টাচ্ছে।
ওই স্টুডিওতেই একটি প্রতিমায় দেখা গেল, অসুরের হাতে উদ্যত অস্ত্র নেই। বরং দুহাতে দেবীর কাছে অস্ত্রসমর্পণ করার ভঙ্গি। শিল্পীর কথায়, “ওই প্রতিমায় নারীশক্তির কাছে অশুভ শক্তির আত্মসমর্পণের থিম রয়েছে। বর্তমানে যেভাবে নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদে নারীদের একজোট হতে দেখা যাচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই ওই থিম।” |
|
শিলিগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পরিবেশ রক্ষার থিমও দেখা গেল শিলিগুড়ির কুমোরটুলিতে. দেবী প্রতিমার পুরোটাই সবুজ রঙের। পোষাক থেকে অস্ত্র সবেতেই হালকা-অথবা গাঢ় সবুজ রং। প্রায় ১৫ ফুট লম্বা ওই প্রতিমা মহালয়ার আগের দিন পাড়ি দেবে মেঘালয়ে। মৃৎশিল্পী গণেশ পালের কথায়, “উদোক্তারা কিছু বলেননি। তবে পাহাড়ের কোলে মেঘালয়ের জন্য প্রতিমা বানাতে হবে শুনেই পরিবেশকে বেছে নেই। সবুজ রং পরিবেশের প্রতীক। সে কারণেই সবুজ রঙের প্রতিমা বানিয়েছি। উদ্যোক্তারা এসে দেখেও খুব খুশি হয়েছেন। পরের বার শিলিগুড়ির জন্যও এমন প্রতিমা বানানোর ইচ্ছে রয়েছে।”
বর্তমানে শহর এলাকা থেকে প্রায় লুপ্ত হতে বসা শীতলপাটির ব্যাবহারও হচ্ছে কুমোরটুলিতে। শোলার তৈরি প্রতিমার উপরে মাটির প্রলেপ পড়েছে। দুর্গার শাড়ি থেকে কার্তিক-গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতীর ধুতি, শাড়ি সবই তৈরি হয়েছে শীতল পাটি দিয়ে।
পরিবর্তনের ছবি দেখা গিয়েছে দেবীর শাড়িতেও। সাধারণত আটপৌড়ে লাল পাড়ের অথবা একরঙের শাড়িতেই দেবীদুর্গার আগমন হয়। কিন্তু, কুমোরটুলির অধীর পালের প্রতিমায় শাড়িতে আঁকা নানা রকমের নকশা রয়েছে। অধীরবাবুর কথায়, “দিন বদলাচ্ছে। তার ছোঁয়া পড়বে না!” |
|
|
|
|
|