মাটিগাড়ায় বোমা-গুলি নিয়ে তাণ্ডব, আহত ২ |
সংগ্রাম সিংহ রায় • শিলিগুড়ি |
মধ্য রাতে ‘তোলা আদায়’ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে তুলকালাম হয়ে গেল শিলিগুড়ির কাছে মাটিগাড়াতে। খোদ পুলিশ কমিশনারের অফিসের অদূরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে বোমা-গুলির লড়াই হয়েছে। মনা মোদক নামে এক জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভাঙা বোতল দিয়ে মেরে আহত করা হয় আর এক গোষ্ঠীর সিন্টু দে নামে এক যুবককে। দু’জনেই তৃণমূল কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তৃণমূল প্রভাবিত দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই মাটিগাড়ার পরিবহণ নগরীতে ওই সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার সকালে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে শতাধিক যুবক মাটিগাড়া বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ীরা মাটিগাড়া থানা ঘেরাও করে রাখেন। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে পুলিশ গিয়ে দোকানপাট খোলানোর ব্যবস্থা করে। |
|
মাটিগাড়া পরিবহণ নগরের সামনে পুলিশি প্রহরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে যা পদক্ষেপ করার করব।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন জানান, ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি বলেন, “সকলের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, মারপিটের অভিযোগ ও অস্ত্র আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও খোঁজা হচ্ছে।” ধৃত সুরজিৎ সরকার এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।
ওই রাতে দু’পক্ষের বচসা থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বোমা, পিস্তল নিয়ে লড়াই শুরু হয়। বোমার শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। ওই সময়ে বোতল ভেঙে সিন্টুবাবুকে জখম করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে গুলি চলে। গুলিবিদ্ধ হন মনাবাবু। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা মহাসচিব কৃষ্ণ পাল এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ নেই। দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই। এটা দু’টি ক্লাবের কিছু ছেলের মধ্যে পুরানো গোলমালের ফল।” |
|
তৃণমূলের পতাকা নিয়ে মাটিগাড়া বাজার বন্ধ করছে একদল যুবক।
শুক্রবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
তবে সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “দলের তরফে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের তরফে অনেকেরই অভিযোগ, ওই এলাকায় তোলা আদায়কারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে জন্যই দীর্ঘক্ষণ ধরে বোমা-গুলির লড়াই হলেও পুলিশ দেরি করে ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে পুলিশ কমিশনারের দাবি, ওই এলাকায় তোলা আদায়ের ব্যাপারে আগে কোনও লিখিত অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। পুলিশও দেরি করে যায়নি। স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকারের কিন্তু অভিযোগ, “এক ঘণ্টা ধরে বোমা-গুলির লড়াই চলল পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে। পুলিশ কী করল? এ তো কার্যত ঘটনায় মদত দেওয়া হল।” তিনি জানান, তোলা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন। |
|