তবে একই সঙ্গে তাঁদের আশা, দেবীর কৃপায় অন্তিম লগ্নে দুর্যোগ কেটে গিয়ে সকলেই পুজোর আনন্দে মাতবেন।
ইছামতী নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আশপাশে দোতলা-তিনতলা বাড়ির মাঝে আস্ত একটা গ্রাম। সেখানে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে কাশফুল। শিউলির গন্ধে চারদিক ম ম করছে। লাল কাঁকড় মাটির রাস্তা চলে গিয়েছে গ্রামের ভিতরে। পুকুরে হাঁস চরছে। ফুটে আছে শালুক, পদ্ম। গ্রামের মাঝে এক বটগাছতলায় মারাংবুরুর (আদিবাসীদের দেবতা) থানে মাদলের তালে তালে নাচ-গান করছে আদিবাসী মেয়েরা। এ ভাবেই মণ্ডপে ইষ্টিকুটুমের পলাশবনিকে তুলে ধরতে চাইছে বদরতলা রিক্রিয়েশন ক্লাব। মাস দুয়েক ধরে অক্লান্ত খেটে চলেছেন শিল্পী সুশান্ত মণ্ডল ও মৃণ্ময় ঘোষ। শুধু আদিবাসীদের গ্রাম তুলে আনাই নয়, পলাশবনির আদিবাসী জীবনযাত্রাকে জীবন্ত করতে অন্তত ৬০ জন আদিবাসী পুরুষ ও রমণীকে নিয়ে আসা হবে। পুজোর দিনগুলিতে তাঁদের পা আর গলা তাল-সুরের ছন্দে মাতিয়ে দেবে দর্শনার্থীদের।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বিপ্লবের এক সন্ধিক্ষণে ১৯৩০ সালে বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত কয়েকজন তাজা যুবককে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘ব্যায়ামপীঠ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও শরীর চর্চার সেই ধারা অব্যাহত। পরে নাম হয় জাতীয় পাঠাগার (ব্যায়ামপীঠ)। এ বার পুজোয় তাঁদের উপহার বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। বিশাল ৭০ ফুট উঁচু মণ্ডপে দেবী দর্শন করতে হলে দর্শকদের পেরোতে হবে গুহা, খরস্রোতা ঝরনা। দেবীও এখানে বৈষ্ণোদেবীই। উদ্যোক্তাদের ভাবনাকে রূপ দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন শিল্পী বাপ্পা মুখোপাধ্যায়। |
মিজোরামের পাবর্ত্য উপজাতিদের চিত্রকলা, ভাস্কর্য নিয়ে পুজোর লড়াইয়ে টক্কর দিতে মাঠে নেমে পড়েছে তরুণ সঙ্ঘ। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে চল্লিশটি মডেল এবং মিজো সংস্কৃতির আদলে প্রতিমা। ভাবনাতেই বোঝা যায় এ বার সেরা পুজোর লড়াইয়ে বেশ কোমর বেঁধেই নেমেছেন এঁরা। উই দ্য গ্রিন ক্লাবের এ বারের ভাবনা সুন্দরবনের চালচিত্র। নৌকা আর মধু ভরা মৌচাকের নীচে দেবীর অধিষ্ঠান। পুরনো হাভেলির ভৌতিক পরিবেশ আনতে ছবি, মমি নিয়ে মণ্ডপ তৈরিতে নেমে পড়েছে দেশবন্ধু অ্যাথলেটিক ক্লাব।
সুদূর রাজস্থানের হাওয়া মহল নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছে ‘প্রান্তিক’। আস্ত একটি ঢাকের আদলে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন বিদ্যুৎ সঙ্ঘের কর্তারা। আমেরিকার হোয়াইট হাউসের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করছে ইয়ং স্টার ক্লাব। শহিদ দীনেশ ক্লাবের উপহার দক্ষিণ ভারতের চামুন্ডেশ্বরী মন্দির। বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ মিলন সঙ্ঘের। নজরকাড়া প্রতিমা ও মণ্ডপ নিয়ে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে রয়েছে বাজারপাড়া সর্বজনীন, ভারতী সঙ্ঘ, ইউনাইটেড ক্লাব, নিউ উদয়, অর্ঘ্য ক্লাব, অমর সঙ্ঘ, চৌমাথা, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, বিধান সঙ্ঘ, স্মৃতি সঙ্ঘ, রিজেন্ট ক্লাব, সঙ্ঘশ্রী, দেবদূত সঙ্ঘ, প্রগতি সঙ্ঘ, মহুয়া সঙ্ঘ প্রমুখ। এ ছাড়া স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, ন্যাজাট, টাকি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জেও বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজো নজর কাড়বে।
|