|
|
|
|
ভিমরুলের বিষ হুল ঘুম কেড়েছে চিনের
সংবাদ সংস্থা • হংকং |
ছোট্ট এক ফালি বাঁধাকপির খেতের সেই জায়গাটা কাঁপা হাতে দেখাচ্ছিলেন চেন। ওইখানেই মরে পড়েছিলেন তাঁর বন্ধু ইউ ইহং। দৈত্যাকার ভিমরুলের মরণ-কামড়ে শেষ হয়ে যান ইউ।
চিনের শাংক্সি প্রদেশের আংকাঙ্গ শহরের বাসিন্দা চেন বলছেন, “ওকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, ওর ট্রাউজারে তখনও দু’টো ভিমরুল ছিল। ভিমরুলগুলো মারাত্মক। ইউয়ের কিডনি আর যকৃৎ কাজ করছিল না। প্রস্রাব করতে পারছিল না।” ৪০ বছরের শক্তসমর্থ কৃষক ছিলেন ইউ। চাষ করতে গিয়েই পা পড়ে ‘এশিয়ান জায়ান্ট হর্নেট’-এর চাকে। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিমরুল ঘিরে ধরে ইউকে। ফুল হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে থাকলেও বিষ-হুল ফুটিয়ে দেয় তার মধ্যে দিয়েই। ইউ পালানোর চেষ্টা করলেও তাঁর
পিছনে ধেয়ে যায় ভিমরুলের দল। হুলের বিষে তাঁর হাত, পা, মাথা, ঘাড় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। লুটিয়ে পড়েন ইউ। |
|
জায়ান্ট হর্নেট-এর হুলে এ রকম গর্ত তৈরি হয়েছে হাতে। |
জায়ান্ট-হর্নেটের আক্রমণে এমন পরিণতি হচ্ছে অনেকেরই। মারা না গেলেও আক্রান্তরা ভোগ করছেন অসহ্য যন্ত্রণা। সারা শরীর থেকে যেন মাংস খুবলে নেওয়া হয়েছে। কালো গর্ত হাতে পায়ে। দৈত্যাকার ভিমরুলের কামড়ে ‘অ্যালার্জি’ হতে শুরু করে। শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে শেষমেশ মৃত্যু। চিনের শাংক্সি প্রদেশের ইউয়ের মতো দুর্ভাগ্য অনেকেরই। গত তিন মাসে ৪২ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বিষ হুলে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৭৫ জন। শাংক্সি প্রদেশেরই হানঝং এবং শাংলুও শহরেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দৈত্যাকার ভিমরুল।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওদের বাসা আক্রান্ত হয়েছে না বোঝা পর্যন্ত জায়ান্ট-হর্নেট নাকি হামলা করে না। কিন্তু সেটা হলেই সাংঘাতিক বিপদ। কারণ এরা বাসা করে সাধারণত গাছের গুঁড়ি বা মাটির নীচে। বোঝাই যায় না এমন কোনও বাসা রয়েছে। ফলে মানুষের পক্ষে তা আরও বিপজ্জনক। তা ছাড়া, আবহাওয়ার পরিবর্তনে এদের প্রকোপ বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উজ্জ্বল রং, মানুষের ঘাম, মদের গন্ধ এবং মিষ্টি জিনিসে আকৃষ্ট হয় এরা। গতি সম্পর্কেও এরা ভীষণ সচেতন। মানুষ বা পশু যে যে দিকেই ছুটুক, ওরা দারুণ ভাল বুঝতে পারে। কামড়ের ভয়ে মানুষ যত দৌড়োয়, এরা ততই তেড়ে যায় তাদের দিকে। একা নয়, একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে। যেমনটা হয়েছিল ইউয়ের ক্ষেত্রেও।
বাসিন্দাদের বাঁচাতে এখন চিকিৎসার পাশাপাশি দৈত্যাকার ভিমরুলের বাসা ভাঙার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু বাসা পুড়িয়ে ফেলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ এদের বাসা খুঁজে পাওয়াটাই কঠিন কাজ। একই সঙ্গে বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, হাত-পা ঢাকা পোশাক পরে বেরোতে। তা সত্ত্বেও আতঙ্ক যাচ্ছে না। এত দিন মৌমাছির হুলের জ্বালা নিয়ে আতঙ্কে ভুগত মানুষ। খুনি ভিমরুলের পরমপ্রিয় খাদ্য সেই মৌমাছি। অতএব হুলের বিষক্রিয়ার নিরিখে এই ভিমরুলই যে সর্বশ্রেষ্ঠ আসনটি পাবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
হচ্ছেও তাই। যন্ত্রণা, গভীর ক্ষত আর বিষজ্বালায় আক্রান্ত মানুষেরা সব ভুললেও, ভুলতে পারছেন না খুনি ভিমরুলের আক্রমণের স্মৃতি। মৃত্যুদূতদের কথা ভেবে হাসপাতালেও শিউরে উঠছেন আক্রান্তরা।
|
পুরনো খবর: খুনি ভিমরুলের কামড়ে চিনে মৃত ৪২ |
|
|
|
|
|