পুজোয় গান বাজাতে হলে ছাড়পত্র নিতে হবে, এই নিয়ম মানতে এ বারও নারাজ হুগলির বেশ কিছু পুজো কমিটির কর্তা ব্যক্তিরা। সরকারি নির্দেশ মতো, কপিরাইট (স্বত্বাধিকার) আইন অনুসারে পুজো কমিটিগুলিকে ৫৫২ টাকা জমা দিয়ে ওই ছাড়পত্র নিতে হবে। হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “মণ্ডপে গান বাজাতে হলে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে, এটাই সরকারি নির্দেশ। সব পুজো কমিটিকে তা মানতে হবে। না হলে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকরা বিষয়টি দেখছেন।”
শ্রীরামপুরের পুজো কমিটিগুলির একাংশ অবশ্য নির্দেশ মানতে নারাজ। আদৌ ওই টাকা সরকার নিতে পারে কিনা, এই তর্ক তুলেছে তারা। তাদের যুক্তি, সরকার সরাসরি ওই টাকা নিচ্ছে না। কপিরাইট নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংগঠনের তরফে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের বক্তব্য, সরকারি নির্দেশ অনুসারেই ওই বেসরকারি সংস্থাকে টাকা নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘পিপিএল’ নামে ওই সংস্থার থেকে অনুমোদন না নিয়ে গান বাজালে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনিক কর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে অনেক পুজো কমিটিই স্বেচ্ছায় টাকা জমা দিয়ে অনুমতি নিচ্ছেন। শ্রীরামপুরের ২৮-এর পল্লির কর্মকর্তারা জানালেন, ২০১১ সালেও তাঁরা টাকা জমা দিয়েছিলেন। এ বারও দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র দফতরের সহকারী সচিব পদমর্যাদার এক অফিসার চিঠি লিখে কপিরাইট আইন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ‘পিপিএল’ সংস্থাকে অনুমোদনের ফি আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা (‘নোডাল এজেন্সি’) হিসেবে নির্দিষ্ট করেছে। ফলে ওই টাকা তোলার অধিকার ওই সংস্থার উপরেই বর্তায়।
চিঠির বক্তব্য, জনবহুল জায়গায় (পাবলিক প্লেস) গান বাজাতে হলে ওই ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। হোটেল-রেস্তোরাঁ বা দোকানেও কপিরাইট-যুক্ত গান বাজালে ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশ পেয়ে পুজো কমিটিগুলিকে বৈঠকে ডেকে শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ছাড়পত্র না নিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
শ্রীরামপুর দুর্গাপূজা কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির কর্তারা অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পিপিএল-কে তাঁরা টাকা দেবেন না। কমিটির সভাপতি হৃষিকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওই বেসরকারি সংস্থা যে বিল দিচ্ছে তাতে সরকারের কোনও দফতরের চিহ্ন নেই। হুগলির অন্যত্র টাকা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু দুর্গাপুজোতেই বা টাকা দাবি কেন?” শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটি দুর্গোৎসব সমন্বয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি, তৃণমূল নেতা প্রবীর পাল বলেন, “সরকার সরাসরি টাকা নিলে দেখা যেত। কিন্তু এনজিও নিচ্ছে।” টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করেছেন হুগলির কেন্দ্রীয় দুর্গাপুজো কমিটির কর্তা বিভূতিভূষণ দাসও।
পিপিএল সংস্থার তরফে নীলাঞ্জন ঘোষদস্তিদার বলেন, “সর্বত্র আমাদের প্রতিনিধিরা আছেন। আইন মোতাবেক টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে।” শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলেন, “সরকারি নির্দেশ ছাড়া কি প্রশাসন টাকা চাইতে পারে? পুজোকর্তাদের বিষয়টি ভাল ভাবে বোঝানো হয়েছে।” পিপিএল সূত্রে জানানো হয়েছে, সংগৃগিত টাকা কপিরাইট বোর্ডে পাঠানো হয়। ক্যাসেট কোম্পানি এবং শিল্পীরা তার একাংশ পান। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এই আইন নতুন কিছু নয়। গত দু’বছর থেকেই কপিরাইট আইন বাস্তবে প্রয়োগ করার এই নির্দেশটি কার্যকর করা হয়েছে। তবে এর আগে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। |