নাবালিকা পরিচারিকাকে বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও শেষে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার উত্তর বাকসাড়ায়। ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে ওই পরিবারের লোকদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে ওই পরিবারের ২ জন গ্রেফতার হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে ওই এলাকায় বাড়ি কিনে স্ত্রী রীতা ও ছেলে রাজশেখরকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন প্রাক্তন রেলকর্মী শ্যামাপদ বর। অভিযোগ, গত ২ অক্টোবর শ্যামাপদবাবু ও তাঁর স্ত্রী ক্যানিং থেকে বছর বারো বয়সের এক কিশোরীকে পরিচারিকার কাজের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার পরে দু’দিনের মধ্যেই তার উপরে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে ওই কিশোরী। এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মেয়েটির অভিযোগ, সে অসুস্থ থাকায় শুক্রবার কাজ করতে পারেনি। তাই পরিবারের সকলে মিলে তাকে মারতে মারতে বাড়ির বাইরে বার করে দেন। পরে রাস্তা থেকে ফের টেনে-হিঁচড়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে ফের অত্যাচার শুরু করেন। কোনও রকমে ওই কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে এলাকার লোকেদের সব কথা জানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নাবালিকা পরিচারিকার মুখে পুরো ঘটনার কথা শোনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে ওই বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। গোলমাল আরও বেড়ে ভাঙচুর হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে সাঁতরাগাছি থানার পুলিশ। শ্যামাপদবাবু, তাঁর স্ত্রী রীতাদেবী ও ছেলে রাজশেখরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে শ্যামাপদবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন ওই নাবালিকা বলে, “আমার শরীরটা খারাপ ছিল। কাজ করতে চাইনি বলে গৃহকর্ত্রী রীতা ও তার ছেলে রাজশেখর আমাকে মারধর করে গলা টিপে ধরে। তার পরে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার চেষ্টা করে।” পুলিশ জানায়, মেয়েটির বাবা রাজমিস্ত্রি, তার তিন ভাই বোন। অভাবের সংসার, তাই বাড়ি থেকেই তাকে উত্তর বাকসাড়ার ওই পরিবারে কাজের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অর্চনা পাল বলেন, “মেয়েটিকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে দেখে ওকে আটকাই। দেখি, মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে। ওর মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, গালে-গলায় আঁচড়। আমরাই ওকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই।” আর এক বাসিন্দা রঞ্জু ঘোষ বলেন, “এর আগেও ওই পরিবারের লোকজন এই ভাবে মারধর করে কয়েক জন নাবালিকা পরিচারিকাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির জন্য পুলিশের কাছে এলাকার পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর করা অভিযোগ দায়ের করেছি।” হাওড়ার ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “পরিবারের গৃহকর্ত্রী ও তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিশোরীর বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলেই মেয়েকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” |