|
|
|
|
|
ভাড়া বাড়িয়ে দীনেশ-লাইনেই ছুটল রেল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
হয়তো ‘লেট’ হলো একটু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দীনেশ ত্রিবেদীর লাইনেই ছুটতে হচ্ছে রেলকে!
আক্রার বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া সংস্কারের সব বন্দোবস্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দীনেশ ত্রিবেদীই করে গিয়েছিলেন। তার জেরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোপে মন্ত্রিত্বই খোয়াতে হয় তাঁকে। সরকার থেকে তৃণমূল সরে যাওয়ায় রেল মন্ত্রক এসেছে কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু এক দফা ভাড়া বাড়ানো ছাড়া যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাসুলের সেই স্থায়ী সংস্কার তারাও করে উঠতে পারছিল না। রেল মহলে এক রকম সন্দেহই বদ্ধমূল হয়ে উঠেছিল ভোটের আগে ‘জনমোহিনী’ হতে চাওয়া সরকার আদৌ এ কাজ আর করে উঠতে পারবে তো! তবে সন্দেহ কাটছে। জ্বালানি তেলের বিপুল আমদানি খরচের ধাক্কায় দীনেশের দেখানো ভাড়া সংস্কারের পথই বেছে নিচ্ছে রেল, এবং তা পুজোর আগেই। আপাতত যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাসুল বাড়ছে দূরপাল্লার ট্রেনে।
আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বছরের দু’বার যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাসুল পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রেল মন্ত্রক। সেই মতো গত এপ্রিলের পর চলতি অক্টোবর মাসে তেলের বাজারের ওঠাপড়ার সঙ্গে ভাড়ার বিন্যাস খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় রেল মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, গত কয়েক মাসে যে ভাবে ডলারের তুলনায় টাকার পতন ঘটেছে, তাতে ডিজেল আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছে বিপুল। সেই বাড়তি বোঝা সামলাতেই আগামী সপ্তাহ থেকে আরও একপ্রস্ত যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাসুল বাড়াচ্ছে রেল। মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ যাত্রায় লোকাল ট্রেন ও মেট্রো রেলে হাত না দেওয়া হলেও দূরপাল্পার ট্রেনে সব শ্রেণি মিলিয়ে গড়ে ২ শতাংশ ও পণ্য পরিবহণে ১.৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া ঠিক করার ‘ট্যারিফ কমিটি’ ঘোষণা হবে পুজোর পরেই।
বর্তমানে দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিটের দামের ত্রিশ শতাংশ জ্বালানি খরচ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। একে বলা হয় ফুয়েল অ্যাডজাস্টমেন্ট কমপোনেন্ট (এফএসি)। দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই পেট্রোপণ্যের বাজার দরের সঙ্গে এই এফএসি বাড়ানো-কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ডিজেলের বিপুল মূল্যবৃদ্ধির চাপে সেই সূত্র মেনেই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।
সম্প্রতি মালগাড়ি চালানোয় খরচ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ১৫.৫%। যাত্রীভাড়ার ক্ষেত্রে সেই খরচ প্রায় ৭.৫%-এর কাছাকাছি। এর ফলে রেলের গচ্চা গিয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। সেই বাড়তি অর্থ তুলতেই এই ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। মন্ত্রক জানিয়েছে এর ফলে যাত্রীভাড়া বাবদ ৪৫০ কোটি টাকা ও পণ্য মাসুল থেকে ৭৫০ কোটি টাকা আয় হবে।
ভাড়া সংস্কারের পিছনে উল্লেখজনক ভূমিকা নিয়েছে যোজনা কমিশনও। গত মাসে ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়ে যাওয়ার পর থেকেই ডিজেল আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছিল। বাড়তি খরচ সামলাতে অক্টোবর থেকেই ভাড়া বাড়ানোর জন্য তাড়া দেয় যোজনা কমিশন। রেল কর্তাদের এ বিষয়ে একাধিক বার ‘পরামর্শ’ দেয় তারা। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে রেল ভাড়া বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল খোদ কংগ্রেসের অন্দরমহলেই। নতুন ভাড়ার বিন্যাস চূড়ান্ত করেও তাই রাজনৈতিক সম্মতির অপেক্ষায় ছিলেন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে। রেল সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর সেরে দেশে ফেরার পরেই এ বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।
তবে সরকারি ভাবে আজও ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা করেনি রেল মন্ত্রক। কবে করা হবে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু মন্ত্রকের একাংশ স্থির-নিশ্চিত সোমবার থেকেই নতুন ভাড়া চালু হয়ে যাবে। |
|
|
|
|
|