থাকবে না-বোতাম
পাঁচ রাজ্যের ভোটে প্রথম মহড়া মোদীর
লোকসভা ভোটের আগে আরও একটা কংগ্রেস-বিজেপি টক্করের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিল নির্বাচন কমিশন।
ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি ও মিজোরাম পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে ১১ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর। এর মধ্যে শুধু মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তীসগঢ়ে নিরাপত্তার কারণে দু’দফায় ভোট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এই বিধানসভা নির্বাচনেই প্রথম বার ভোটারদের হাতে কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না করার মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে প্রার্থী তালিকার শেষ বোতামে রাখা হবে সেই বন্দোবস্ত। পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে মোট ১১ কোটিরও বেশি ভোটার এই পর্বে ভোট দেবেন।
এত দিন পর্যন্ত ভোটারদের কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে সে কথা খাতায়-কলমে নথিভুক্ত করে জানাতে হতো। ফলে গোপন থাকত না ভোটারের পরিচয়। কিন্তু এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ব্যালট পেপার ও ইভিএমে ‘নোটা’ (নন অফ দ্য অ্যাবাভ) বিকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের হাতে পরিচয় গোপন রেখেই প্রত্যাখ্যানের অধিকার তুলে দিল নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত আজ বলেছেন, “এই প্রথম বার ভোটাররা ‘নোটা’ ব্যবহার করতে পারবেন। কমিশন সেই ব্যবস্থা করছে। এ ব্যাপারে সচেতনতাও তৈরি করা হবে।” ফলে ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে মাইলফলক হতে চলেছে ১১ নভেম্বর তারিখটা।
মিজোরামকে বাদ দিলে গো-বলয়ের বাকি চারটি রাজ্যেই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চলছে কংগ্রেস ও বিজেপি। কাজেই পরীক্ষার মুখে যেমন মনমোহন সিংহের সংস্কার নীতি, তেমন নরেন্দ্র মোদীও। যদিও ইতিহাস বলে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে যে দল জয়ী হয়, তারাই পরে দিল্লির মসনদ দখল করে, এমন নয়। ২০০৪ সালে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ় দখল করেছিল বিজেপি। কংগ্রেস জিতেছিল দিল্লিতে। বিধানসভা ভোটের ফলাফলে উল্লসিত অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার লোকসভা ভোট এগিয়ে আনা সত্ত্বেও তাতে কিন্তু তাদের ভরাডুবি হয়। আবার উল্টোটাও হয়েছে। ২০০৯-এ দিল্লি দখলে রেখেছিল কংগ্রেস, মিজোরামেও জেতে তারা। লোকসভা ভোটে দেখা যায়, দেশের আস্থা অটুট মনমোহন সরকারেই।
এ বারের ভোটের আগে যুযুধান দু’পক্ষের কেউই খুব একটা স্বস্তিতে নেই। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগে মনমোহন সরকার জর্জরিত। সাম্প্রতিক অর্ডিন্যান্স বিতর্কের পর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। কিন্তু তারাও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার আগে পর্যন্ত হাজার চেষ্টা করেও দলের অটুট ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে পারেনি। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান গোড়া থেকেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণার বিরোধী ছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এতে তাঁর রাজ্যে বিধানসভা ভোটে মেরুকরণ হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শিবরাজের আর্জি খারিজ করে দেয় সঙ্ঘ।
কাজেই এক অর্থে এই ভোট মোদীর মহড়া। বিধানসভা ভোটে বিজেপি আশানুরূপ ফল না করলে তার দায় ঘুরেফিরে মোদীর নেতৃত্বের উপরে এসে পড়বে বলেই মনে করছেন অনেকে। লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ তাঁর বিরোধীরা যে তখন আবার সুর চড়াবেন না, তা কে বলতে পারে! আবার পাল্টা যুক্তিতে মোদী শিবির বলছে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী জেনেশুনেই ওই ঝুঁকি নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দলের রণকৌশলে কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করে লোকসভার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামতে পারবেন তিনি। তা ছাড়া বিধানসভায় স্থানীয় বিষয়ে ভোট হলেও সে সবকে টেক্কা দিয়ে ‘মোদী ফ্যাক্টর’ কতটা প্রভাব ফেলে, তারও এক পরীক্ষা হয়ে যাবে এই নির্বাচনে।
যদিও মোদীই সম্প্রতি রাজধানীতে এক জনসভায় স্বীকার করে নেন যে, বিধানসভা ভোটে দিল্লিতে অন্তত যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। একাধিক বৈঠক করেও দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিজেপি। এই নিয়ে চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন শীলা দীক্ষিত। মধ্যবিত্ত সমাজের কাছে উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর। কমনওয়লেথ গেমসে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও এখন স্তিমিত। হালে পেঁয়াজের দাম নিয়ে শীলার সরকারের বিরুদ্ধে কিছুটা তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমেছিল বিজেপি। তাতে যে বিরাট কিছু ফায়দা তোলা গিয়েছে, এমন নয়। ইতিমধ্যে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটকেই পাখির চোখ করছেন কেজরিওয়াল। দাবি করছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁরাই পাবেন। কিন্তু বিজেপির আশঙ্কা, এতে কংগ্রেস-বিরোধী ভোট হয়ে যাবে।
দিল্লিতে বিজেপির যে অবস্থা, কংগ্রেসের সেই অবস্থা মধ্যপ্রদেশে। শিবরাজ সিংহের বিরুদ্ধে এখনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিকই হয়নি। হাইকম্যান্ডের একাংশ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও দিগ্বিজয় সিংহ ও কমল নাথের মতো নেতারা তাঁর বিরোধী। সে কারণে মোদীর মতোই তৃতীয় বার শিরোপা পেতে মহারণে নামতে চলা শিবরাজ আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে।
একই ভাবে ছত্তীসগঢ়েও রমন সিংহের বিরুদ্ধে দলের ‘মুখ’ খুঁজে পাচ্ছে না কংগ্রেস। এখানে বেগ দিচ্ছেন অজিত জোগী। দুর্নীতির পুরনো অভিযোগ থাকায় তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে আপত্তি রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের। কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ জোগীকে সমর্থন করছেন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “অজিত জোগী হলেন আমাদের ইয়েদুরাপ্পা। তাঁকে নেওয়াও মুশকিল, আবার না নিলেও সমস্যা।” কাজেই হাইকম্যান্ড শেষ পর্যন্ত জোগীকে মেনে নেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
মিজোরামে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। সমানে সমানে টক্করের আবহাওয়া মোটামুটি দেখা যাচ্ছে রাজস্থানে। বিভিন্ন কারণে জাঠ ভোটব্যাঙ্কের একাংশ অশোক গহলৌত সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। জাঠ পুত্রবধূ বসুন্ধরা রাজে সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে মসনদ পুনরুদ্ধারে কোমর বেঁধেছেন। যদিও সাম্প্রতিক কালে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বয়স্ক নাগরিকদের পেনশন বাড়ানোর মতো প্রকল্প হাতে নিয়ে অনেকটা ঘুরেও দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।
এখন প্রশ্ন, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে আদৌ কি বিবেচ্য হবে এই সব স্থানীয় ঘটনাপ্রবাহ? নাকি একা নরেন্দ্র মোদীর নামেই মিলবে ২০১৪-র সম্ভাব্য সমীকরণের পূর্বাভাস? কেউ কেউ বলছেন, মহড়ায় একা মোদী নন। এই প্রথম ‘না বলার অধিকার পাওয়া’ গণতন্ত্রেরও এ এক মহাপরীক্ষা!

কবে কোথায়
ছত্তীসগঢ় ১১ ও ১৯ নভেম্বর
মধ্যপ্রদেশ ২৫ নভেম্বর
রাজস্থান ১ ডিসেম্বর
দিল্লি ৪ ডিসেম্বর
মিজোরাম ৪ ডিসেম্বর
গণনা ৮ ডিসেম্বর


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.