|
|
|
|
ঢাকে পড়ল কাঠি |
পুজোর ভোজে উলটপুরাণ
পাল্লা ভারি বাঙালি খানার
সুচন্দ্রা ঘটক |
|
এ যেন চক্রবৎ পাল্টে যাওয়া।
বছরভর বাড়িতে বাঙালি রান্না খেয়ে উৎসবে রেস্তোরাঁয় রোল-কাটলেট-চাউমিন ছিল স্বাদবদলের রেসিপি। মেট্রো-যুগে সে রেওয়াজ পাল্টে গিয়েছে পুরো ৩৬০ ডিগ্রি। পুজোয় লোক টানতে এখন বাঙালি ঝোল-ঝাল-অম্বলই অবলম্বন রেস্তোরাঁ-মহলের। রোজের পিৎজা-স্যান্ডউইচ ছেড়ে বিশেষ চারটে দিন বাঙালি শাক-চচ্চড়িই এখন পুজোর মেনুতে হিট।
সাবেক রেসিপিতে মন জয় করতে এগিয়ে আসছে স্টার হোটেল থেকে শুরু করে সাহেবি রেস্তোরাঁও। ওবেরয় গ্র্যান্ডের লা তেরাসে বসে অষ্টমীর লুচি-কুমড়োর ছক্কা বা শুক্তো-পোস্তও তাই আর দিবাস্বপ্ন নয়। তার সঙ্গে নানা কিসিমের ‘কবিরাজি কটলেট’, বিটকুচির ভেজিটেবিল চপ-টপ থেকে পাতুরি-মালাইকারিরও দেদার আয়োজন। পনির পোস্ত, আলু-মাংসের ঝোল, সরষেবাটা চিংড়িতে সাজছে ফ্লুরিজ-এর মেনুকার্ডও। চেনা ইংলিশ ব্রেকফাস্ট না চেয়ে এই পুজোয় ফ্লুরিজে বসেই চেখে দেখা যায় বরিশালের মুরগি, লাল শাক। হানা দেওয়া যায় দ্য পার্কের ব্যাঙ্কোয়েটসে। ডাকবাংলোর মুরগি, চিংড়ির মালাইকারিতে সেখানে জমানো যায় ভোজ।
তবে অতিপরিচিত ঘরোয়া পদে মেনুকার্ড ভরাতে নারাজ ওহ্ ক্যালকাটা। অচেনা পদে চমক দিতে প্রস্তুত সেখানকার শেফ। মোচা আর চিংড়ির বিশেষ মিশেলে তৈরি হবে চট্টগ্রামের চিংড়ির শিক। উৎসবের কোনও দুপুর অথবা সন্ধ্যায় আড্ডা জমাতে সেখানে বসে চেখে দেখা যায় সর্ষে-মাংস, ময়মনসিংহের মুরগি ফ্রাই বা টমেটো-গোলমরিচ-রেড ওয়াইনে সাঁতলানো ‘মুরগি গিলাসি’।
নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দুই শেফকে এনেছে হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল। সেখানকার রেস্তোরাঁ কলস-এ তৈরি হবে যশোহরের নারকেল-চিংড়ি, হাঁসের মাংস-ভুনা, কুমিল্লার ইলিশঝাল। শেষপাতে নবাবি জাফরানি জিলিপি।
ঘি-ভাত, রুই মাছের কালিয়ার মতো ঘরোয়া বাঙালি খাবারে পেটপুজো সারতে যাওয়া যায় বালিগঞ্জের গোল্ডব্রিক রেস্তোরাঁতেও। হিংয়ের কচুরি, লুচি, পোস্তর বড়া, বেগুনি, মুগ ডালে উৎসবের মেনু ভরিয়েছে তারা। একই ভাবে ডাব চিংড়ি, ধোকার ডালনা, পাবদা মাছের ঝালে উৎসবের ক’দিনের জন্য বিশেষ বুফে সাজাচ্ছে ক্যামাক স্ট্রিটের আইভরি। সেখানকার মেনুতে বিশেষ সংযোজন আমসত্ত্বের পায়েস। লাউডন স্ট্রিটের ফরচুন সিলেক্ট লাউডনে পুজো স্পেশাল রকমারি বাঙালি মিষ্টি। মালাই চমচম থেকে কমলা ভোগ, বেক্ড মিহিদানা, চিত্রকূট থাকছে সবই। মেনকোর্সে কুচো চিংড়ির পোলাও, পটল পোস্ত, ছানার কালিয়া।
তবে পুজোয় এক দিন চিনে সোয়াদ না পেলে এখনও মন ভরে না বাঙালির। সে স্বাদে নতুন করে মজিয়ে দিতে হাজির মেনল্যান্ড চায়নার শেফ। কিয়ংস চিলি চিকেন, পিশ চিলি বেসিল, ইউ ইয়াং ক্রিস্পি পোট্যাটো-র মতো পদ চাখতে পারেন। জিভে জল আসবে ডিম, গোলমরিচ, কর্নফ্লাওয়ারে ম্যারিনেট করা শ্রেডেড চিকেনে।
স্বাস্থ্য সচেতনতার যুগে নিরামিষের চল বেড়েছে বাঙালিদের মধ্যে। সে কথা মনে রেখে পুজোর মুখে কাঁকুড়গাছিতে খুলেছে নিরামিষ রেস্তোরাঁ গো গ্রিন। পাস্তা, পিৎজা, স্যুপ থেকে শুরু করে কাবাব, বিরিয়ানি সবই থাকছে। গোলপার্কের কাছে আর এক নতুন রেস্তোরাঁ চাওলাজ-এ ভোজ
জমবে ফিশ ইরানি, কালি মিরচ কা চিকেন, তন্দুরি চিকেনের মতো রকমারি উত্তর ভারতীয় রান্নায়।
আর সব রকম স্বাদ যদি চাই এক ছাদের তলায়, চলে যাওয়া যায় চারনক্সে। ষষ্ঠী থেকে নবমী সেখানে মিলবে খাঁটি বাঙালি থেকে ফিউশন, রকমারি সব রান্না। উৎসব জমিয়ে তুলতে পেটপুজো সারা যায় ওয়াসাবি রায়তা সহযোগে ইলিশ বিরিয়ানি, আম সালসার সঙ্গে তাওয়া গ্রিল্ড ফিশ অথবা চিরাচরিত চিতল পেটি, চিকেন বোটি কাবাবে। শেষ পাতে বিশেষ ফ্রেশ ম্যাঙ্গো কুলফি।
চার দিনের ভুরিভোজের রুটিন তৈরি আর কঠিন কাজ নয় নিশ্চয়ই?
|
|
|
|
|
|