|
|
|
|
|
থিমে তক্ষক, মানতের মাঠও
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় |
|
অষ্টমীর রাতে ঘুরতে ঘুরতে রিয়া, রিমি, অভিষেক পৌঁছে গিয়েছে গ্রামে। গাঁয়ের উঠোনে ঢেঁকিতে ধান ভাঙছেন মহিলারা, রয়েছে পাল্কি। সন্ধিপুজো শুরু হতে ডেকে উঠল তক্ষক।
না, গ্রামে যায়নি রিয়ারা। আসলে বেহালা নূতন দলের মণ্ডপ। শিল্পী রণো বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে থিম হিসেবে তুলে ধরেছেন তক্ষককে। টিকিটিকি প্রজাতির এই প্রাণী আজ চোরাশিকারের দাপটে বিপন্ন। উত্সবের দিনগুলোতে পরিবেশ সচেতনতার পাঠ দিতেই নূতন দলের এই প্রয়াস।
বেহালা থেকে এগিয়ে ভিড়ের সঙ্গে পায়ে পায়ে অভিষেকরা ঢুকে পড়ল হরিদেবপুর অজেয় সংহতির মণ্ডপে। সেখানে এ বার অন্যতম উপকরণ ঢেঁকি। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে আলোর বিচ্ছুরণ। পুজো কমিটির পক্ষে হিল্লোল বসু জানালেন, তাদের থিম সৃষ্টি সূত্রের রহস্য।
অজেয় সংহতি থেকে বেরোতেই রিমি বলে উঠল, “চল, কামডহরির পঞ্চদুর্গাটা দেখে যাই।” তো চল মন কামডহরি পূর্বপাড়ার মণ্ডপে। সেখানে প্রতিমা দর্শন সেরে পরের গন্তব্য গড়িয়ার রায়পুর সর্বজনীন। সেখানে সে কালের এক জমিদারের স্ত্রী-কে ঘিরে গড়ে উঠছে ‘বৌ ঠাকুরানীর মাঠ’। যেখানে আজও বহু মানুষ আসেন নিজের মানত নিয়ে। রায়পুরে দর্শন শেষ হতে তিন বন্ধু রওনা দিল অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতির দিকে। মুক্তমনের প্রতীক হিসেবে সেখানে বেছে নেওয়া হয়েছে ঘুড়িকে। আর মণ্ডপের উপরের ভাগ শান্তির প্রতীক পদ্মের আদলে। ঘুড়ির আকৃতিও পদ্মের মতোই।
অভিষেক আবার স্থাপত্যকীর্তির ভক্ত। এক বন্ধুর মুখে শুনেছিল, লেক গার্ডেন্সের লেকপল্লি সংহতির মণ্ডপ হচ্ছে রাজস্থানের দিলওয়ারা মন্দিরের ধাঁচে। শিল্পী দীপক ঘোষের হাত ধরে দিলওয়ারা মন্দির অবশ্য এর আগেও দেখেছে কলকাতা। এ বার সেই দীপকবাবুই দক্ষিণের এই লেকপল্লি সংহতির দায়িত্বে। বললেন, “শৈশবের ছোট্ট ক্লাবে দিলওয়ারা মন্দিরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই।”
শুধু তো লেকপল্লি দেখলে চলবে না, পিকনিক গার্ডেনের সুনীলনগরের পুজোটাও দেখতে হবে। এই পুজো থেকেই এক সময়ে হাত পাকিয়েছেন বহু শিল্পী। এ বারে সেখানে শিল্পী তাপস কাঞ্জিলালের হাত ধরে ফুটে উঠছে রঙ্গোলি চিত্রকলা। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে নানা ধর্মীয় রূপ। পুজোকর্তারা বলছেন, পর পর তিন বছর ধরে কাজ করে সেখানে ঘরের ছেলে হয়ে উঠছেন তাপসবাবু।
শেষ হয়ে আসছে অষ্টমীর রাত। ট্যাংরা ঘোলপাড়া দেখেই থামবে রিয়ারা। গত কয়েক বছরে ঘরের ছেলে হয়ে ওঠা শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারও সেখানে হাজির। বিষয় হিসেবে রয়েছে শ্রীযন্ত্রম ও ত্রিভুজের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯টি ত্রিভুজ স্তম্ভের উপরে মণ্ডপ। এর সঙ্গেই শিল্পী বেছে নিয়েছেন আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা। শান্তির প্রতীক হিসেবে প্রবেশদ্বারে থাকছে পাখি।
অষ্টমীর ঠাকুর দেখা শেষ। ধীরে ধীরে ফুটছে নবমীর আলো। উত্তর শহরতলির বাড়িতে ফিরতে ফিরতেই তিন জনে ঠিক করে ফেলল, নবমীর রাতে উত্তর কলকাতার অন্তত কয়েকটা পুজো দেখতেই হবে।
যেমন কথা তেমন কাজ। নবমীর রাতে অভিযান শুরু হল সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার থেকে। উত্তর কলকাতার এই পুজোতে ভিড় তো বাঁধাই। তার উপরে এ বার সেখানে গড়ে উঠেছে ভ্যাটিকান সিটির এক মনুমেন্ট। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দর্শন।
সন্তোষ মিত্র দর্শন শেষ করে অভিষেক বলল, “উত্তরে কিন্তু কুমোরটুলি পার্কটা দেখতেই হবে তোদের। হাজার হোক, থিম হয়েছে নারীশক্তি!” কুমোরটুলি পার্কের পুজোকর্তা অনুপম দাস জানালেন, শিল্পী মিন্টু পালের পরিকল্পনায় নারীশক্তিকে ফুটিয়ে তুলছেন তাঁরা। প্রতিমার হাজারটা হাত। মণ্ডপ হচ্ছে শিবলিঙ্গের আদলে।
ঘুরতে ঘুরতেই রিমি টের পেল, নতুন জুতোয় ফোস্কা পড়েছে। বাড়ির পথ ধরার আগে জগত্ মুখার্জি পার্কের পুজো অবশ্যই দেখতে হবে। শিল্পী সুতনু মাইতির পরিকল্পনায় এ বার তারা গড়ে তুলেছে তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরমের মন্দির। ঠাকুর দেখা শেষ। ফিরতে ফিরতে অভিষেক বলে উঠল, “শেষটা কিন্তু জম্পেশ হল। পুজোর পুজো, সঙ্গে এক ঝলক তামিলনাড়ু ফ্রি!”
|
|
|
|
|
|