|
|
|
|
দেবীপক্ষের শুরুতেও সেই বৃষ্টিই ‘অসুর’
ঋজু বসু
|
দেবীপক্ষের প্রথম দিনটিতেও ছাড় মিলল না বৃষ্টি-অসুরের হাত থেকে। ব্যারাকপুরের অনঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল থেকেই মুখ গোমড়া করে বসে। মা-বাবার সঙ্গে নিউ মার্কেটে পুজোর জুতো কেনার প্রোগ্রামটাই বুঝি বা বাতিল হয়ে যায়!
বড়দের বহু কষ্টে রাজি করিয়ে ছেলে শেষ পর্যন্ত তাঁদের কলকাতায় টেনে আনতে পারলেও বৃষ্টিজনিত যানজটে ভুগতে হয়েছে ভালই। তবু ভিড় জমেছে বাজারে-বাজারে। আশঙ্কা ছিল বৃষ্টি বুঝি মহালয়ার ছুটির মেজাজটা পণ্ড করে দেবে। শুক্রবার কলকাতার জনতার আমুদে মেজাজ তবু সব বাধার সঙ্গেই লড়ে গিয়েছে। নরেন্দ্রপুর থেকে আসা প্রবীণ দম্পতি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গড়িয়াহাটে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য কেনা-কাটা সারেন। পুলিশের অবশ্য দাবি, দু’দিন আগে গাঁধী জয়ন্তীতেই ঢের বেশি ভিড় হয়েছিল। ফুটপাথ ছাড়িয়ে বাজারুদের ভিড় উপচে পড়েছিল বড় রাস্তাতেও। জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে সে দিন জওহরলাল নেহরু রোডে দক্ষিণমুখী ট্রাফিক মাত্র একটি সারিতে চালাতে হয়। মহালয়ার ছুটি সত্ত্বেও এ দিন ভিড়ের ঝক্কি পুলিশকে ঢের কম পোয়াতে হয়েছে।
পুজোর বাজার তা-ও বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই দিলেও পুজোর প্রস্তুতি কিন্তু ধাক্কা খেয়েছে। খিদিরপুর ২৫ পল্লির থিম-স্রষ্টা পার্থ দাশগুপ্ত যেমন বেজায় ফাঁপরে পড়েছেন। মণ্ডপের সামনে খোলা আকাশের নীচে অস্ত্রশস্ত্র সাজিয়ে ইনস্টলেশন আর্টে যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহ তৈরির চেষ্টাটাই বুঝি মাঠে মারা যায়। বৃষ্টির উদ্ভট মেজাজ-মর্জির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বারবার ত্রিপল টাঙাতেই তাঁর সহযোগীরা গলদঘর্ম! প্রতিমার চালচিত্র ও মণ্ডপ সাজানোর কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদেরই বারবার এসে সামনের অংশটাকে বাঁচাতে হাত লাগাতে হচ্ছে। ফলে, বারবার ঠোক্কর খাচ্ছে কাজের গতি। |
|
ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট চত্বর। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র। |
মহালয়ার শুভ দিনে যাঁরা কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আনার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদেরও মাথায় হাত। ভবানীপুরের একটি পুজোর কর্তারা দিনভর হত্যে দিয়ে কুমোরটুলিতে পড়ে। আকাশের ভাবগতিক দেখে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখালেন না তাঁরা। এতটা পথ প্লাস্টিক-কাঁথায় মুড়ে ঠাকুর নেওয়াটাও বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। অগত্যা, কাল আবার আসব বলে রণে ভঙ্গ দিলেন।
মৃৎশিল্পী পশুপতি রুদ্রপাল চিন্তিত বেলুড়ের রাসবাড়ির ঠাকুর ডেলিভারি নিয়েও। তাঁদেরও আসার কথা এর মধ্যেই। আহিরীটোলার ঘাট থেকে নৌকোয় গঙ্গা পেরিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার কথা। এমনধারা বৃষ্টি চললে সেটা কী ভাবে সম্ভব হবে, তা দুর্গতিনাশিনীই জানেন! বাস্তবিক এমন বৃষ্টি চললে শুধু ঠাকুর নিয়ে যাওয়াই নয়, সময়মতো প্রতিমার ডেলিভারিও কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
কেন? পশুপতি বলছিলেন, এখন রঙের কাজ চলছে। এমন মেঘলা বাদুলে আবহাওয়ায় প্রতিমার গায়ে রং টানতে চায় না। রং শুকোনোও সমস্যা। ব্লু ল্যাম্পের আগুনে সেঁক দিয়ে দিয়ে প্রতিমা শুকোনো দুঃসাধ্য কাজ।
বৃষ্টির ভিলেনিটা অবশ্য এ দিন শুরু হয়েছে সেই সাত-সকালেই। তখন সকাল সাড়ে ছ’টা। তর্পণ করতে যাওয়া জনতা পড়িমরি করে বাগবাজার থেকে বাবুঘাটে মাথার উপরে ছাউনির আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত। কত কষ্টে ছ’সাত পুরুষ পর্যন্ত পূর্বজদের নাম কাগজে লিখে মন্ত্র পড়ার জন্য সঙ্গে করে এনেছিলেন অনেকেই। বৃষ্টির হঠাৎ বিশ্বাসঘাতকতায় তাঁরাও ল্যাজেগোবরে। ঠাকুরমশাইয়ের কথা শুনে মন্ত্র আওড়ানোর সময়ে দেখেন, কাগজটা ভিজে নেতিয়ে পড়েছে। ধেবড়ে যাওয়া কালির অক্ষরগুলো পড়ার উপায় নেই। কোনওমতে বিড়বিড় করে সামাল দিতে হল। এ দিন দুপুরে কিছুক্ষণ রোদের মুখ দেখা গেলেও ফের আকাশের মুখ কালো।
এ সবই বর্ষার স্লগ ওভারের দাপট। আবহবিদেরা এতে বিস্মিত নন। কিন্তু এটা তো উৎসবের মেকওভারেরও স্লগ ওভার বলে কথা! এই সময়ে মণ্ডপের কাজই হোক বা পুজোর বাজার— একটি দিন নষ্ট মানেই রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। মহালয়ার দিনে বৃষ্টিতে পুজোর আগমনীর সুরটাই কেমন টাল খেয়ে গেল। |
|
|
|
|
|