|
|
|
|
মানবিক মুখকে সম্মান, পুজো উদ্বোধনে এ বার ফুটপাথবাসী
আর্যভট্ট খান
|
তাঁর নিজেরই কোনও ঠিকানা নেই। পাড়ার একটি দোকানের সামনের উঠোনে রাতে শুয়ে পড়েন তিনি। মাসখানেক আগে তিনি আদ্যাপীঠের একটি পাড়ায় চালাতেন ভাড়ার রিকশা। এখন মালিক রিকশা বিক্রি করে দেওয়ায় পাড়ার এক দোকানে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু তিনিই এখন পুজোর মরসুমে পাড়ার হিরো। হবেন নাই বা কেন? এয়ারপোর্ট এলাকার দুর্গানগরের বাদরা অগ্রগামী পঞ্চমীর দিন তাকে দিয়েই পুজো উদ্বোধন করাতে যাচ্ছে। ওই উদ্যোক্তাদের মতে, কৈলাস আমাদের সমাজের এক মানবিক মুখ। কোনও ভিআইপি-র থেকে তিনি কোনও অংশে কম যান না।
ওই রিকশাচালকের নাম কৈলাস পার্সি। বছর পঞ্চাশের কৈলাস কী এমন করেছেন যে তাঁকে ডেকে পুজো উদ্বোধন করাচ্ছে একটি পুজো সংগঠন?
পাড়ার যে দোকানের সামনে তিনি দিন গুজরান করেন, সেখানেই মাস খানেক আগে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন যশোদা নস্কর নামে বৃদ্ধা এক কুষ্ঠ রোগিণীকে। অভিযোগ, বৃদ্ধাকে দেখেনি তাঁর ছেলেরা। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন কৈলাস। তাঁর সেবা শুশ্রূষা করা, রাতে মশারি টাঙানোর কাজও করে দিতেন তিনি। কয়েক দিন এ ভাবে কাটার পরে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে ওই খবর প্রকাশিত হলে সবার টনক নড়ে। বিষয়টি পুলিশ ও স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের নজরে আসে। ওই বৃদ্ধার ঠাঁই হয় আদ্যাপীঠের আশ্রমে। এখন তিনি ভাল আছেন। পাড়ার লোকেরা জানাচ্ছেন, যাঁর নিজেরই কোনও ঠিকানা নেই, তিনি এক অসুস্থ বৃদ্ধাকে ঠাঁই দেওয়ার মতো কাজ করেছেন। তিনি অন্যদের থেকে অনেকটাই আলাদা। |
|
স্বাগত:
খেটে খাওয়া হাত দিয়ে হবে পুজোর উদ্বোধন।—নিজস্ব চিত্র। |
ওই ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে মাস খানেক। বেকার হয়ে যাওয়ায় পাড়ার আসবাবপত্রের দোকানদার পলাশ গায়েন তাঁকে ছুতোরের কাজ শিখিয়ে কাজে লাগান। ওই দোকানে বসেই কৈলাস বললেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে একটি ক্লাব থেকে এসে বলল, তুমি একটা ভাল কাজ করেছ। তোমাকে আমাদের পুজো উদ্বোধন করতে হবে। শুনে ঘাবড়ে যাই। এত দিন তো জানতাম সিনেমার নায়ক-নায়িকারা পুজো উদ্বোধন করেন।” সংগঠকেরা জানিয়েছেন মঞ্চে উঠে কিছু বলতেও হবে তাঁকে, এমনটাই জানালেন কৈলাস। বললেন, “বেশ ভয় লাগছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, কোনও দিন স্টেজে উঠিনি। কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলব। ”
তবে কৈলাসের এই আশঙ্কাকে আমল দিচ্ছেন না আসবাবপত্রের দোকানদার পলাশবাবু বা তাঁর পাশের দোকানদার তরুণকুমার দাস। পলাশবাবুরা বলেন, “স্টেজে উঠে কী বলতে হবে তা আমরা ওকে শিখিয়ে দেব। ঘাবড়ানোর কিছু নেই।”
স্ত্রী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। কৈলাসবাবুর ছেলে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে থাকেন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। পলাশবাবু, তরুণবাবুরাই কৈলাসের আত্মীয় পরিজন। ওই বৃদ্ধা চলে যাওয়ার পরে ফের ওই চাতালেই শুচ্ছেন কৈলাস। জানালেন, পলাশরাই তাঁকে পুজো উদ্বোধনের জন্য নতুন একটা প্যান্ট কিনে দিয়েছেন। এ বার পুজোয় একটা জামাও হবে তার। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “কৈলাস তো এখন আমাদের পাড়ার হিরো। এ বারের পুজোটা আমাদের কাছে স্পেশাল।”
দুর্গানগরের বাদরা অগ্রগামী ক্লাবের সম্পাদক জয়ন্ত দত্ত বলেন, “সত্যিই উনি আমাদের সমাজে স্পেশাল। উনি তো মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমাদের পুজো উদ্বোধনের দিন কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তিও থাকবেন। তবে উদ্বোধন করবে কৈলাসই। একজন অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন উনি। এই মানবিক মুখের জন্য আমরা গর্বিত।” |
|
|
|
|
|