|
|
|
|
আত্মরক্ষার শক্তি রয়েছে সব নারীর অন্তরেই
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় |
কফি খেতে খেতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি অনার্সের ছাত্রী অভিনন্দা দত্ত। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে দুটো ছেলে টানা তিন মাস তাঁকে ফলো করে। শেষে বন্ধুদের জানান অভিনন্দা। বন্ধুরা দলবেঁধে ছেলে দুটোকে শাসিয়ে এলে রণে ভঙ্গ দেয় তারা।
প্রায় একই গল্প প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাসের ছাত্রী সঞ্জনা রায়ের। সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে কলেজ পর্যন্ত রোজ তাঁকে বিরক্ত করত কিছু ছেলে। তিনিও বন্ধুদের সাহায্যে নিস্তার পেয়েছিলেন।
কিন্তু সব সময় সাহায্য না-ই থাকতে পারে। তখন কী করবে মেয়েরা?
এ নিয়ে শুক্রবার বিকেলে শরত্ বসু রোডের কাফে কফি ডে-তে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল ও অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনা হল অভিনন্দা আর সঞ্জনার। আনন্দবাজার পত্রিকা ও অম্বুজা সিমেন্টের ‘শক্তিরূপেণ’ কর্মসূচিতে বাছাই করা হয়েছে ওই দুই কলেজছাত্রীকে। তাঁরা পেয়েছেন শক্তিরূপেণ ব্যাজ। নারীর অন্তরের শক্তির উপলব্ধি করানো এর উদ্দেশ্য। অংশগ্রহণকারী মহিলাদের থেকে কয়েক জনকে বেছে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ ও নারীর অধিকার নিয়ে আইনের পাঠ দেওয়া হবে বিনামূল্যে। |
|
‘শক্তিরূপেণ’-র আলোচনাসভায় দুই কলেজছাত্রীর সঙ্গে অগ্নিমিত্রা পাল
এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: দেবীপ্রসাদ সিংহ। |
চার জন একমত হলেন একটা বিষয়ে পুলিশের ভরসায় সব ছাড়লে হবে না। ১০০ ডায়ালে ফোন করেও পুলিশের সাহায্য না মেলার নিদর্শন আছে। বরং আত্মরক্ষার ভার নিতে হবে নিজেদের। ১৩৩৩-র প্রবাসী পত্রিকার এক সংখ্যায় লেখা ছিল ‘আত্মরক্ষার সামর্থ্য থাকা নারীদের রক্ষণের সর্বোত্কৃষ্ট ও একান্ত আবশ্যক উপায়।’
মেয়েদের তলোয়ার খেলা, লাঠিখেলা শেখার চল বহু পুরনো। চণ্ডীগড়, উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্য, বেঙ্গালুরু, ইন্দৌরের মতো কিছু শহরে মেয়েদের বন্দুক বা রাইফেলের লাইসেন্স নেওয়ার হার বেড়েছে। প্রায় সব মেগাসিটিতে পেপার স্প্রে, চিলি স্প্রে, স্টান গান, টেজার গানের বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। মহিলাদের অনেকের বক্তব্য, ব্যবহার না করলেও আত্মরক্ষার জিনিস সঙ্গে থাকাটা সাহস জোগায়। মুম্বইয়ে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলে ‘ডিফেন্স আগেনস্ট রেপ অ্যান্ড ইভটিজারস’ (ডেয়ার) নামে একটা দল গড়েছে। দলে আছেন কিছু বিশেষজ্ঞ, যাঁরা মার্শাল আর্ট শেখানো থেকে মানসিক কাউন্সেলিং, সব করেন। ইদানীং কলকাতাতেও ক্যারাটে ক্লাসে মেয়েদের ভর্তির হার বেড়েছে।
কনীনিকা বলছিলেন, “মোবাইল সংস্থাগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একটা পরিকল্পনা করাই যায়। কিছু নম্বর দেওয়া হবে। কোনও মেয়ে বিপদে পড়ে তা ডায়াল করলেই সব মেয়ের কাছে খবর পৌঁছবে। যে এলাকায় মেয়েটি বিপদে পড়েছে, সেখানকার মেয়েরা তাঁকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করবে।” সকলেই এ বিষয়ে একমত। আরও কিছু প্রস্তাব শোনা গেল। যেমন সমাজ, প্রশাসন, পরিবারে কিছু রীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। মেয়েদের সমানাধিকার দেওয়া, স্কুলে যৌনশিক্ষার মতো বিষয়গুলি হয়তো তৃণমূল স্তর থেকে নারী নির্যাতনে রাশ টানতে পারে। |
|
|
|
|
|