|
|
|
|
পুজোর শহরে অপরাধ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা
শিবাজী দে সরকার |
দুই মেয়েকে নিয়ে মধ্য কলকাতার একটি মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন কল্যাণীর এক দম্পতি। দর্শনার্থীদের ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বেশ কয়েকজন যুবক মেয়ে দু’টির উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য করে। শেষে বাধ্য হয়েই আর কোনও পুজো না দেখে বাড়ি ফিরে যান ওই দম্পতি। ঘটনাটি ২০১২ সালের অষ্টমীর রাতের।
ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে মহিলাদের কোনও ভাবে হেনস্থা না করতে পারেন, তাই এ বার আগে থেকেই তৈরি হয়েছে পুলিশ। যে কোনও রকম অপরাধ ঠেকাতে তৈরি হয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ বাহিনী। যে সব মণ্ডপে ভিড় বেশি হয়, সেগুলিতে ছোট ছোট দলে মোতায়ন করা থাকবে ওই বাহিনী। পাশাপশি, যে সমস্ত রাস্তায় দর্শনার্থীদের ঢল নামে, সেখানেও থাকবে তারা। কলকাতার গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার ও কর্মীদের ওই নজরদারির কাজে লাগানো হবে। মণ্ডপে এ ধরনের কোনও অভিযোগ এলে মহিলাদের সুরক্ষায় নতুন আইন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, পুজোর দিনে বাইকবাহিনী যাতে তাণ্ডব না চালাতে পারে, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে লালবাজার। সঙ্গে থাকছে মিসিং পার্সন ব্যুরোর একাধিক দলও। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, এ বার যেমন আঁটোসাঁটো নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে, অন্য বারের চেয়ে তা অনেক বেশি।
পুলিশ জানায়, পুজোর দিনগুলি নির্বিঘ্নে কাটাতে প্রতিটি মেট্রো স্টেশনের সামনে থাকবে পুলিশবাহিনী। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শহরের প্রায় ২৭০০টি পুজোকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনের মণ্ডপ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন কলকাতা পুলিশের এক জন করে ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। তার অধীনে থাকবে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, শহরের ৬৫টি থানা এলাকায় বিভিন্ন মণ্ডপের বাইরে ৪৫টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। যার উপর থেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) মাধ্যমে দর্শনার্থীদের ভিড়ে নজরদারি করবেন দু’জন করে পুলিশকর্মী। এ ছাড়া, বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ এবং গুরত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে প্রায় ৭৫টির মতো সিসিটিভি। যা অন্য বারের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
এ ছাড়া, যে সব পুজোমণ্ডপে ভিড় বেশি হয়, সেখানে পুজো কমিটিকে সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে বলেছে পুলিশ। মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে নজরদারির জন্য কমপক্ষে ছ’টি করে সিসিটিভি লাগাতে বলা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ সর্বক্ষণ খেয়াল রাখতে পুজো কমিটিগুলিকে একটি কন্ট্রোল রুমও খুলতে বলা হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে এ বার চতুর্থী অর্থাৎ ৮ তারিখ বিকেল থেকেই শহরের রাস্তায় মোতায়ন করা হবে কুড়ি হাজারের বেশি পুলিশকর্মীকে। তাঁদের সাহায্য করার জন্য থাকছে সিভিক পুলিশ এবং স্বেচ্ছা সেবকেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, এ বারই প্রথম পুজোর দিনে গঙ্গায় বিশেষ টহলদারি চালাবে রিভার ট্রাফিক পুলিশ। চারটি বোট নিয়ে নদীতে টহল দেবে পুলিশ বাহিনী। পাশাপাশি, পুজোর দিনে রাস্তায় থাকবে ৭০টির মতো রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। কোথাও কোনও গণ্ডগোল হলে ওই বাহিনী প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌছবে এবং অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাবে। শহরের গুরত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর ২২টি জায়গায় নিরাপত্তার জন্য রাখা হচ্ছে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লালবাজারের প্রধান কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা হচ্ছে অতিরিক্ত বেশ কয়েকটি কন্ট্রোল রুম। সেখানে অতিরিক্ত বাহিনী থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|