পুজোর লড়াই জমেছে সাবেকিয়ানা আর থিমে |
সাবেকি পুজোর সঙ্গে সঙ্গেই এখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে থিম পুজোর আয়োজন। এতদিন প্রতিমায় সাবেকিয়ানার প্রথা মেনে পাড়ার ও এলাকার সর্বজনীন পুজোমণ্ডপগুলিতে পূজিতা হয়েছেন দেবী দুর্গা। পরে প্রতিমায় সাবেকিয়ানা রাখার পাশাপাশি মণ্ডপ সজ্জায় লেগেছিল থিমের ছোঁয়া। আজ, দিন পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই চলও পাল্টেছে। এখন থিমের পুজোতে মহানগরের পাশাপাশি মফস্সল শহরগুলিও পিছিয়ে নেই। এমন থিম পুজোর হিড়িকে শিল্পীরা কোথাও সাম্প্রতিক অতীতের ঘটনা ফুটিয়ে তুলছেন, কোথাও আবার সামাজিক ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। পুরাতন ও আধুনিকতার অভিনব মিশেলে আমজনতা সামিল হচ্ছেন এই আনন্দ উৎসবে। বোলপুর শহরের সর্বজনীন পুজোমণ্ডপগুলি এ ভাবেই সেজে উঠছে হাল্কা-গভীর নানা থিমের ভিড়ে।
সামাজিক ক্ষেত্রে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ছাড়াও ভেদাভেদ ভুলে উৎসবের দিনগুলিতে সকলে এক হয়ে ঐক্যের বার্তা দেওয়া মূল লক্ষ্য কোনও কোনও পুজো উদ্যোক্তাদের। প্রাচীন প্রথা মেনে প্রতিমায় সাবেকিয়ানা-সহ ‘শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা’ থিমে তৈরি হচ্ছে বোলপুরের কালিকাপুরের আদ্যাশক্তি সঙ্ঘের মণ্ডপ। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে গোটা মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে ধানের শীষ ও তুষ দিয়ে। দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে মণ্ডপের মূখ্য দ্বারে থাকছে চন্দননগরের আলোক সজ্জা। যাতে দর্শক দেখতে পাবেন পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। উদ্যোক্তাদের দাবি, সাবেক প্রতিমায় নতুন থিমের মণ্ডপ সজ্জা হলেও পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী ফি বছরের মতো এ বারও লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর নানা অবতার দিয়ে মণ্ডপের ভিতরের জায়গ াসাজানো হয়েছে। অসমের খলপা বাঁশ দিয়ে, দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ সাজিয়েছে বোলপুরের কাছারীপট্টি যুব সম্প্রদায়ের সর্বজনীন পুজো। বাঁশ, বাঁশের ছেলা দিয়ে গোটা মণ্ডপকে বাঁশেরকেল্লা আকৃতির থিমে মোড়ক দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের দাবি, হরেক রকমের কার্টুন দিয়ে সাজানো মণ্ডপ, বিশেষ করে শিশুদের পছন্দের প্রথম তালিকায় নিয়ে যাবে এই মণ্ডপ।
আবার খাদ্যশস্য, প্রকৃতি এবং পরিবেশ নিয়ে সর্বদা সচেতন শহরের মিশন কম্পাউন্ডের বোলপুর অ্যাথলেটিক অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের ভাবনা বীরভূমের বাউল। সচরাচর পরিবেশ বান্ধব পুজো মণ্ডপের তকমা পাওয়া এই পুজো এ বার সেজেছে কয়েক লক্ষ গমের কাঠি দিয়ে। বাদ্যযন্ত্রকে সামনে রেখে মণ্ডপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রত্যেক কুঠুরির উপরে শোভা পাচ্ছে রাঙামাটির বাউল। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল অবলম্বনে মণ্ডপ সাজিয়েছে বোলপুরের শুঁড়িপাড়া সর্বজনীন অগ্রগামী সঙ্ঘ। উদ্যোক্তারা জানান, এলাকার ৫০ জন পড়ুয়ার নানা শিল্পকর্মের সম্ভারও থাকছে তাঁদের মণ্ডপে। তবে বিশেষ নজর কাড়বে আলোর রোশনাইও। কখনও পুরনো ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি কখনওবা বৌদ্ধ বিহারের আদলে মণ্ডপ করে দর্শকদের নজর কেড়েছে বোলপুরের সংগ্রাম সঙ্ঘের মাধুপুকুর দক্ষিণপাড় সর্বজনীন পুজো। এ বার আস্ত একটি আদিবাসীয পল্লি উঠে এসেছে তাদের মণ্ডপে। পুরাণের কথা-কাহিনির অবলম্বনে রকমারি পটচিত্র দিয়ে মণ্ডপ সাজানো-সহ আধুনিক প্রজন্মের কাছে প্রাচীন এবং বিরল পুরাণের কাহিনী তুলে ধরেছে স্কুলবাগান সর্বজনীন। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁরা এই প্রজন্মের কাছে পুরাণের বর্ণিত কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ওই মণ্ডপে পুজোর দিনগুলিতে উপস্থিত থাকছেন পটশিল্পীরাও।
চোখ ধাঁধানো থিম পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নজরকাড়া প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে সাবেকি প্রতিমাও। কোথাও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বয়সীদের জন্য প্রতিযোগিতা ও বিশেষ আলোক সজ্জার মতো বিষয় নিয়ে সমানে পাল্লা দিয়ে আসরে নেমেছে বোলপুর এলাকার একাধিক পুজো মণ্ডপ। রেল ময়দান, ভুবনডাঙা,বাঁধগোড়া, শ্যামবাটি-সহ একাধিক জায়গায় দেবী দুর্গা পূজিতা হচ্ছেন সাবেকী প্রতিমায়। প্রাচীন প্রথা মেনে সুরুলের সরকার বাড়ির পুজোর মতো এলাকার একাধিক বাড়ির পুজো আজও অম্লান। পুজোর ক’টা দিন তাঁদের পরিবারের মিলন উৎসবে সামিল হয়েছেন ভিন রাজ্য এবং বিদেশে থাকা ওই সব বাড়ির ছেলেমেয়েরাও। |