ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র ব্রাসেলসে বসে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ইউরোপের এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রণববাবু জানিয়েছেন, ভারত প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি চায়। কিন্তু, নয়াদিল্লির পক্ষে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনও সমঝোতা করা সম্ভব নয়।
আলোচনার মাধ্যমেই জম্মু-কাশ্মীর-সহ সব সমস্যার সমাধান করতে চান বলে রাষ্ট্রপুঞ্জে বার্তা দিয়েছেন নয়া পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিন্তু, সেই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরে চলছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলাও। প্রণববাবু জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। ব্যক্তিগত স্তরে নওয়াজের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃত্বের সম্পর্কও ভাল।
কিন্তু, ভারতের পক্ষে তার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও সমঝোতা করা সম্ভব নয়। আর সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসে মদত দেওয়াও বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। শিমলা চুক্তির পরে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বন্দি ৯১ হাজার পাক সেনাকে ছেড়ে দিয়েছিল ভারত। যুদ্ধে দখল করা ভূখণ্ডও ছেড়ে চলে এসেছিল ভারতীয় সেনা। প্রণববাবুর মতে, এই পদক্ষেপ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী বোঝাতে চেয়েছিলেন ভারতের অন্য কোনও দেশের ভূখণ্ডের উপরে নজর নেই। অন্য কোনও দেশের উপরে নিজের মতবাদও চাপিয়ে দিতে চায় না নয়াদিল্লি। ভারত এখনও সেই নীতি মেনেই চলছে বলে দাবি রাষ্ট্রপতির।সন্ত্রাসে পাক মদত প্রসঙ্গে বরাবরই কড়া অবস্থান নেওয়ার পক্ষপাতী প্রণববাবু। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময়ে বিদেশমন্ত্রী ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান সফরের প্রশ্নে তখন এবং তার পরেও নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছিলেন প্রণববাবু।
কখনও কখনও এই বিষয়ে খোদ মনমোহনের সঙ্গেও তাঁর মতবিরোধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের অফিসাররা।
নিউ ইয়র্কে মনমোহন-শরিফ বৈঠকের পরেও জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ কমেনি। বৈঠকের ঠিক আগেই জম্মু-কাশ্মীরে একটি থানা ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। গত কয়েক দিন ধরে ওই রাজ্যের কেরন-মেন্ধর সেক্টরে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে সেনাবাহিনীর।
২০১৪ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে মার্কিন সেনা। তখন আফগানিস্তান ছেড়ে অনেক ‘জেহাদি’ কাশ্মীরে লড়াই করতে আসবে বলে হুমকি দিয়েছে পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার নেতা হাফিজ সঈদ। এই পরিস্থিতিতে ব্রাসেলসে বসে প্রণববাবুর পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা কূটনীতিকদের।
ভারতে জঙ্গি হামলার দায় অনেক সময়েই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত সংগঠনের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় এড়াতে চায় ইসলামাবাদ। প্রণববাবুর কথায়, “ওই সংগঠনগুলি আকাশ থেকে পড়েনি। ২০০৪ সালেই পাকিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে দেশের সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে।”
|
সংগ্রহশালায় রাষ্ট্রপতি
অগ্নি রায় • ব্রাসেলস |
ওয়াটারলু-র সংগ্রহশালায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। নেপোলিয়নের শেষ যুদ্ধক্ষেত্রে ১৯৮০ সালে প্রথম বার এসেছিলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী প্রণববাবু। ফিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে বলেছিলেন, বেলজিয়াম যদি এত সুন্দর করে এই যুদ্ধক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে পারে, তা হলে আমরা পারব না কেন? ইন্দিরা হেসে বলেছিলেন, “তুমি তো ইতিহাসের ছাত্র। বলো তো বহিরাগতের বিরুদ্ধে কোন লড়াইটা দিল্লির শাসক জিতেছে? কোন বীরগাথা আমরা সংরক্ষণ করব?” শুনে হেসেছিলেন প্রণববাবুও। |
এ বার ওয়াটারলু ঘুরে রাষ্ট্রপতি বললেন, “অনেক রক্তপাতের পর ইউরোপের মধ্যে এই চেতনার জন্ম হয় যে, অনেক হয়েছে। আর যুদ্ধ নয়। এর পরেই সীমান্তবিহীন বৃহত্তর বাজারের (কমন মার্কেট) কথা বলেছে ইউরোপ, বলেছে অর্থনীতিনির্ভর বিদেশনীতির কথা। ফলে গত পঞ্চাশ বছরে তুলনামূলক ভাবে শান্তিতে রয়েছে মানুষ।” |