পুজোর মুখে মোটা টাকা হাতাতে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র খুড়তুতো ভাইকে অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ। শুক্রবার সেই ছাত্র-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে বর্ধমান জেলা পুলিশ। ‘অপহৃত’ বালক অবশ্য ছাড়া পেয়ে গিয়েছে আগের রাতেই।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রাইভেট টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার সময়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল বুদবুদের কোটা গ্রামের ব্যবসায়ী কিষাণ কর্মকারের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলে সায়ক। বাড়ি থেকে কিছুটা আগে মোটরবাইকে এসে দু’জন তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘন্টাখানেক পরে ফোনে ১২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। রাতেই কিষাণবাবু পুলিশকে জানান।
পুলিশের দাবি, ঘটনার মূল চক্রী কিষাণবাবুর দাদা বামাচরণ কর্মকারের ছেলে রুদ্রনাথ ওরফে সুজয় ওরফে বাবু। বীরভূমের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সে। কিন্তু প্রথমে পুলিশ তা আন্দাজ করতে পারেনি। কয়েক বছর আগে স্থানীয় জমি বাঁচাও আন্দোলনের নেতা কিষাণ চুন-বালির কারবার করে সম্প্রতি তাঁর হাতে বেশ টাকা এসেছে। ব্যবসা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর কিছু ‘শত্রু’ও তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। অপহরণের পিছনে তাদের হাত থাকতে পারে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল।
কিন্তু তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মোবাইলের সিম কার্ড। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল তার সূত্র ধরে মোবাইল সেটটি চিহ্নিত করা হয়। পরে ফের একই নম্বর থেকে ফোন আসে। কিন্তু দেখা যায়, সেট বদলে গিয়েছে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখে, প্রথম সেটটি কিষাণবাবুর এক প্রাক্তন কর্মীর নামে কেনা হয়েছে। ওই কর্মীকে জেরা করে জানা যায়, তাঁর ভোটার পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই বুদবুদের কোটা মোড়ে পাপ্পু বিশ্বাসের দোকান থেকে নতুন সিম কিনেছিল রুদ্রনাথ। দ্বিতীয় সেটটি তারই।
রুদ্রনাথের বাড়ি বুদবুদেই। কিন্তু সায়ক উদ্ধার হওয়ার আগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। বরং তারা কিষাণবাবুকে বলে, কিছু মুক্তিপণ নিয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে দেখা করতে। পুলিশের পরামর্শে তিনি অপহরণকারীদের জানান, আপাতত তিন লক্ষ টাকা দিতে পারবেন। পরে ধাপে-ধাপে আরও দেবেন। টাকা নেওয়ার জন্য তাদের বর্ধমান শহরে বি সি রোডে আসতেও বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ টাকা নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় হাজির হন কিষাণবাবু। সাদা পোশাকে পুলিশ ওত পেতে ছিল। কিন্তু সম্ভবত বিপদ আঁচ করেই অপহরণকারীরা শেষ পর্যন্ত আসেনি। রাতে কোটা মোড়ে তারা সায়ককে ছেড়ে দিয়ে যায়। ৯টা নাগাদ বাড়ির কাছাকাছি দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা পেয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, অপহরণের পরে সায়ককে পানাগড়ের মেহেরা বিল্ডিংয়ে সনু চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী চন্দ্রা চৌধুরীর হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাঁরা রুদ্রনাথের পূর্বপরিচিত। সম্ভবত তাঁদের সে কিছু টাকাও দেবে বলেছিল। এ দিন সকালে প্রথমে বাড়ি থেকেই রুদ্রনাথকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সিমকার্ড বিক্রেতা পাপ্পু এবং পানাগড়ের তরুণ দম্পতিকে ধরা হয়। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকায় পাপ্পুকে পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের জেরা করে পানাগড় থেকেই অমল বাউরি নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, আজ, শনিবার ধৃতদের দুর্গাপুর এসিজেএম আদালতে তুলে রুদ্রনাথকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানানো হবে। সনু ও চন্দ্রার শনাক্তকরণের জন্য সায়ককে দিয়ে ‘টিআই প্যারেড করানো হতে পারে। |