সাধারণ বারোয়ারি পুজোমণ্ডপে অষ্টমীর ভোগ বলতে খিচুড়ি, বেগুন ভাজা আর বড় জোর পায়েস।
কিন্তু দুর্গাপুজোর ভোগ তো শুধু তা নয়। তার নানা রকমফের আছে। সাধারণত পুরনো বনেদি বাড়িতেই যার স্বাদ-গন্ধ মেলে।
অন্ডালের মদনপুরে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো। সেখানে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে যথাক্রমে সাত, আট ও নয় রকমের ভাজা দেওয়ার চল। এ ছাড়া শুক্তো, কচু-কুমড়োর তরকারি, ডাল, ফুলকপির তরকারি, চাটনি, মিষ্টি, পায়েস নিয়ে ভোগ। বাড়ির মহিলারাই মিলে-মিশে রান্না করেন। কিন্তু নবমীর দিন যেহেতু বলি হয় তাই সে দিন বিশেষ ভোগের আয়োজন। সে দিন পোলাও, ভেজিটেবল চপ, মেটে ভাজা, পনিরের কাপতা, আনারসের চাটনি, মিষ্টি দই।
কাঁকসার কুলডিহায় চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ৩১১ বছরের পুরনো। মহিলারা নন, পুজোর শুরু থেকে অষ্টম ও নবম প্রজন্মের পুরুষেরা ভোগ রান্না করেন। স্বপ্নাদেশের কারণেই না কি এই নিয়ম। সপ্তমীর দিন সাত রকমের ভাজা আর লুচি হয়। গ্রামের সব ব্রাহ্মণ পরিবারের নিমন্ত্রণ থাকে। অষ্টমীর দিন আট রকমের ভাজার সঙ্গে লুচি-তরকারি, পায়েস দেওয়া হয়। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ায় এখানে বলি হয় না। অষ্টমীর দিন একটি বিশেষ পায়েস রান্না হয়। ৪০ লিটার দুধ ফুটিয়ে ১৭ লিটার করে তাতে আট মুঠো গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে পায়েস হয়। আগত সকলকে অল্প করে হলেও তা দেওয়া হয়।
কাঁকসারই আড়রার রায়বাড়ির পুজো দু’শো বছরের পুরানো। বাড়ির মহিলারাই রান্না করেন। সপ্তমী ও অষ্টমীতে নিরামিষ ভোগ। তবে সন্ধিপুজোয় বিশেষ প্রথা সাদা পাঁঠা বলি দেওয়া। সেই মাংসই লুচির সঙ্গে ভোগে দেওয়া হয়।
মানকরের বড় কবিরাজ বাড়ির পুজো সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো। এঁদের বৈচিত্র্য নৈবেদ্যর পরিমাণে। ঠাকুরের সামনে বিশাল থালায় ৪০ কেজি আতপ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় সপ্তমী ও নবমীতে। অষ্টমীতে দেওয়া হয় ৫৫ কেজি আতপ চালের নৈবেদ্য। পাঁঠাবলিও হয়।
ভোগ সাধারণ হোক বা অসাধারণ, স্বাদ-গন্ধ তো আসলে নিখাদ পুজোর।
|