তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্প সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বলে স্বীকার করে নিল সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। সংগঠনের কোচবিহার জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রতিনিধিদের মধ্যে বিলি করা প্রতিবেদনে খোলাখুলিভাবে তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদনের রাজ্য পরিস্থিতি আলোচনায় বলা হয়েছে, এই ‘দুর্বিষহ’ পরিস্থিতির মধ্যেই সরকারি কিছু কিছু প্রকল্প যেমন জঙ্গল মহল এলাকায় আদিবাসীদের জন্য ২ টাকা কেজি দরে চাল, কয়েক হাজার ছেলে মেয়েদের সিভিক পুলিশ, ভিলেজ পুলিশ, হোমগার্ডে নিয়োগ, স্কুলের মেয়েদের সাইকেল বিতরণ, বেকারভাতা প্রকল্প, কন্যাশ্রী প্রকল্প কিছুটা হলেও মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ক্লাবগুলিকে যে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে তাও যুব সমাজের একটা অংশকে প্রভাবিত করছে। তবে ওই আলোচনায় শাসকদলের স্নেহধন্যরা প্রকল্পগুলির সুবিধা পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
তৃণমূল সরকারের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের সমালোচনায় দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে একাধিকবার সরব হয়েছেন। এখনও নানা বিষয়ে তাঁরা সরব হচ্ছেন। সেখানে দলের মহিলা সংগঠনের সম্মেলনের প্রতিবেদনের বক্তব্য কার্যত রাজ্য সরকারের উদ্যোগের প্রশংসাই বলেও দলের নেতাদের একাংশের ধারণা। এমন কী প্রতিবেদনের বক্তব্য ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যেও।
পরিস্থিতির জেরে সদ্য নির্বাচিত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদিকা অন্নদা রায় বলেছেন, “সস্তা চমক দিতেই রাজ্য সরকার ওই সব প্রকল্প চালু করেছে। সব মানুষকে আমরা সেটা বোঝাতে পারিনি। এতে মানুষের একাংশের মধ্যে কিছুটা প্রভাব পড়ছে। আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি।”
গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায়ের ব্যাখা, “প্রকল্পগুলির কতদিন চলবে তার নিশ্চয়তা নেই। ওসবের মোড়কে মানুষকে মোহগ্রস্থ করার চেষ্টার কথা ওঁরা (মহিলা সংগঠন) তুলে ধরেছেন। এটা রাজ্য সরকারের প্রশংসার মত ব্যাপার নয়।”
বুধবার ওই সমিতির দুই দিন ব্যাপী কোচবিহার জেলা সম্মেলন শেষ হয়। শহরের সুকান্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ২২৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন থেকে অন্নদা রায়কে সম্পাদক ও শিখা আদিত্যকে সভানেত্রী করে ৫১ জনের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার ১৯ জনের জেলা সম্পাদকমন্ডলীতে নতুন মুখ ৮ জন। বিদায়ী সভানেত্রী জবা পালকে উপদেষ্টা মন্ডলীতে রাখা হয়েছে। ২০১০ সালের তুলনায় কোচবিহার জেলায় সমিতির সদস্য সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫৫ হাজার।
একইভাবে সংগঠনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সদস্য সংখ্যা থাকলেও নেতৃত্ব তৈরিতে দুর্বলতা রয়েছে সংগঠনের। সেদিকে নজর দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় দার্জিলিং জেলা গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠনের ১৩-তম জেলা সম্মেলনে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির পঞ্চায়েত ভবনে অনুষ্ঠিত হয় সমিতির জেলা সম্মেলন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সম্পাদিকা মিনতি ঘোষ। তিনি বলনে, “আমাদের সদস্য সংখ্যা কমেছে ঠিকই। নতুন করে অবার সদস্য তৈরি করতে হবে।” তিনি জানান, ২০১১ সালে রাজ্যের পরিবর্তনের পরে সংগঠনে একটা ধাক্কা লেগেছিল। ওই পরিস্থিতি আমরা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।” |