পশ্চিমবঙ্গ থেকে নারী পাচার নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা। বুধবার নারী পাচার ও নারীদের উপর অত্যাচার রুখতে মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম মুচিয়া এলাকার বাসিন্দা এবং বিএসএফ জওয়ানদের নিয়ে এক সচেতনতা শিবিরে মমতাদেবী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নারী পাচার খুবই বেশি।
মমতাদেবী জানান, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা থেকে নারী পাচার বেশি হচ্ছে। অথচ নাথুলা সীমান্তে তিনি গিয়ে দেখেছেন সেখানে একটিও নারী পাচারের ঘটনা নেই। নারী পাচার রুখতে সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ান ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “নারী পাচার রুখতে পুলিশ, বিএসএফ, সিআরপিএফ, আরপিএফদের যে ভাবে এগিয়ে আসা উচিত সেই ভাবে কেউই এগিয়ে আসছে না।” তাঁর কথায়, যে যার ক্ষেত্রে দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা সবাই যদি নারীপাচার রুখতে এগিয়ে আসতেন তবে এত দিনে দেশ থেকে নারী পাচার বন্ধ হয়ে যেত। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনে নারী পাচার হতে দেখেও আরপিএফ কিংবা রেল পুলিশ প্রতিরোধ করছে না। ফলে নারী পাচার কমার বদলে দিনের পর দিন তা বেড়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাসকারী মহিলারা যখন কাঁটাতারের বেড়ার উপর জমিতে চাষাবাদ করতে যান তখন তাঁদের পুরুষ বিএসএফ জওয়ানরা তল্লাশি চালায়। গায়ে হাত দেয়। যা অত্যন্ত অন্যায়।” মহিলা জওয়ান সীমান্তে মোতায়েন করলে সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে নারী পাচার ও নারীদের উপর অত্যাচার কমবে বলে মনে করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। আর সেই কারণেই বিএসএফ-এ আরও বেশি করে মহিলা জওয়ান নিয়োগ করে আরও মহিলা বিএসএফ ব্যটেলিয়ান দাবি তুলে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “দুই একদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জাতীয় মহিলা কমিশন বিএসএফে মহিলা ব্যাটেলিয়নের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাবে।”
জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন এ দিন বলেন, দূষিত সমাজ ও মেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন।
ধর্ষণ, নারীপাচার ও নারীদের উপর অত্যাচার বিষয়ক বিশেষ টাস্ক ফোর্সের সবর্ভারতীয় চেয়ারপার্সন শ্রীরুপা মিত্রচৌধুরী বলেন, যে রাজ্য থেকে নারী পাচার হয়ে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে সেখানে নারীপাচার কেবলমাত্র সেই রাজ্যকে দোষ দিলে হবে না। যে রাজ্য থেকে নারী পাচার হয়ে অন্য রাজ্যে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে রাজ্যে ও কেন্দ্র উভয়কেই নারী পাচার রুখতে এগিয়ে আসতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা থেকে নারীপাচার রুখতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স ও জাতীয় মহিলা কমিশন যৌথ ভাবে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৭টি বিওপিতে পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে। আজকে থেকে সেই লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা হয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বিএসএফের সঙ্গে সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের মেলবন্ধন তৈরি করে নারী পাচার ও নারীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিন মুচিয়ার পর জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণনগর ও অনুরাগপুর বিওপিতে একই রকম সচেতনতা শিবির করেছেন। এই শিবিরে অন্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন বিএসএফের প্রাক্তন ডিজি এম এল কুমাওয়াত , মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি রাজসিংহ রাঠোর।
মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “জেলায় নারী পাচার রুখতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং ইউনিসেফ যৌথ ভাবে কাজ করছে। আগামী দিনে আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।”
জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “জেলায় নারী পাচার এবং মহিলাদের উপরে অত্যাচার কমানোর জন্য ইতিমধ্যেই একটা মহিলা সেল খোলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার মেয়েদের স্কুলে ছাত্রীদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছি।” ইতিমধ্যেই তিনটি স্কুলে সেই কাজ চলছে। বিএসএফ, গ্রামবাসী পুলিশ মিলে সীমান্তবর্তী এলাকায় মহিলাদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছে। |