ঐতিহ্য মেনে আজও বালুরঘাটের চৌধুরী বাড়ির ডাকরাচন্ডীর মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয় জমিদার আমলে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজো। বালুরঘাট শহর লাগোয়া ডাঙা অঞ্চলের হোসেনপুর এলাকার এই পুজোর বয়স প্রায় ৩০০ বছর।
এখনও পুজোয় স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ ও উন্মাদনা আজও সমানভাবে চোখে পড়ে। প্রয়াত জমিদার সুধীর চৌধুরীর ছেলে স্বপন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে ডাকরাচন্ডী মন্ডপে দুর্গাপুজোর যাবতীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়। স্বপনবাবু জানান, প্রায় ৩০০ বছর ধরে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। আগেরমত জাঁকজমক নেই। আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরাও পুজোয় সামিল হয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। তিথি নক্ষত্র মেনে একচালার প্রতিমায় নাটমন্দিরে দুর্গা পুজোর আয়োজন হয় নিষ্ঠার সঙ্গে
এক সময় বালুরঘাটের হোসেনপুর মৌজা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্রয়াত সুধীর চৌধুরীর জমিদারির অংশ ছিল। সুধীরবাবুর পূর্ব পুরুষেরা ওই হোসেনপুর এলাকায় জমিদারি চালাতে বসতবাড়ি, কাছারিবাড়ি তৈরি করেন। সেসময় এলাকা জঙ্গলে ভর্তি ছিল। বসবাসকারীদের অধিকাংশ ছিলেন আদিবাসী।
কথিত আছে, কোনও একদিন চৌধুরী বাড়ি থেকে একটু দূরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দেবীর আসন পান সুধীরবাবুর এক পূর্বসূরি। চৌধুরীদের পারিবারিক সূত্রেই জানা যায়, ওই আসনে ডাকরাচন্ডী কালী পুজো করত এলাকার এক ডাকাত দল। পরে সময় বদলায়। চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা ওই বেদীতে দুর্গাপুজো শুরু করেন।
স্বপনবাবু জানান, বাড়ির পুজো দেখেই বড় হয়েছেন। এই পুজোর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হ্যাজাকের আলোয় পুজোর চারদিন রাতে মন্ডপের সামনে চন্ডীমঙ্গল, পালা গানের আসর বসত। রাতভর অনুষ্ঠান চলত।
ভোগ আরতির সঙ্গে চলত প্রসাদ বিতরণ। পুজোয় বলি দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিন থেকে বন্ধ। বৈষ্ণব মতে দেবীর আরাধনাই চৌধুরী বাড়ির পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ঠ। গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণে আজ চৌধুরী বাড়ির দেবী সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। |