নাগরিকত্ব হীনতার যন্ত্রণামুক্তির প্রার্থনা জানিয়ে দেবী আরাধনার আয়োজন করেছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ লাগোয়া ছাট কুচলিবাড়ির বালাপুখুরিতে পুজোর আয়োজন এখন জোর কদমে। উদ্যোক্তারা জানান, পুজোর বাজেট খুব বেশি নয়। তবে পঞ্জিকার বিধি মেনে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়।
ইতিমধ্যে প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়েছে। বাঁশ, কাঠ কাপড় আর প্লাইউড দিয়ে ছিমছাম মন্ডপ গড়া হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগের বন্দোবস্ত করার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। এলাকার বাইরের কারখানা থেকে প্রতিমা আনার সমস্যা এড়াতে ছিটমহলেই এক শিল্পীকে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। ঢাকির দলের বায়নাও হয়ে গিয়েছে।
সবমিলিয়ে চোখ ধাঁধানো আলো কিংবা মণ্ডপসজ্জায় চাকচিক্য না থাকলেও পুজো ঘিরে উৎসবের আমেজ। মহাষ্টমীর সকালে দেবীর কাছে হাতজোড় করে নাগরিকত্বহীনতার দুর্দশা ঘোচানোর প্রার্থনা জানানোর ব্যাপারেও পুরো তল্লাটের বাসিন্দারা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মণ্ডপে ওই প্রার্থনা জানিয়ে ব্যানারও দেবেন। পুজো কমিটির কর্তা পিন্টু অধিকারী বলেন, “বহু বছর থেকেই আমরা নাগরিকত্বের স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু এতদিনেও তা পূরণ হয়নি। এবার তাই মায়ের কাছে নাগরিকত্বহীনতার দুর্দশা ঘোচানর প্রার্থনা জানিয়ে সবাই অঞ্জলি দেব। মণ্ডপে ওই প্রার্থনা জানিয়ে ব্যানারও দেওয়া হবে।”
বাসিন্দারা জানান, দুই দেশের মূল ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন, তিনদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমানা ঘেরা ১৬২টি ছিটমহল। তারমধ্যে বালাপুখুরি অন্যতম। অন্যসব ছিটমহলের বাসিন্দাদের মত তাঁদেরও কোন দেশের নাগরিকত্ব নেই। সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র রেশন কার্ড, আঁধার কার্ডও হয়নি। এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য পরিষেবা বলেও কিছু নেই। সবমিলিয়ে দুর্ভোগ বাসিন্দাদের প্রতিদিনের বিষয়। প্রতি বছর কখনও দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের চুক্তি, কখনও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কিংবা ভারত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের যৌথ জনগণনা চলছেই। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি নেই।
ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই নানা চুক্তি, যৌথ জনগণনার মত দুই দেশের সরকারের অনেক উদ্যোগ দেখেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এবার তাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের পুজোর অঞ্জলিতে ওই প্রার্থনা করবেন। আমিও যোগ দেব।”
উদ্যোক্তারা জানান, পুজোর বয়সের সঠিক তথ্য নেই। তবে অন্তত ১২৫ বছরের প্রাচীন বলে ছিটমহলবাসীর ধারণা। ১৯৫০ সালে ছিটমহল তৈরির পর থেকে টানা এই পুজো হচ্ছে। পুজো উপলক্ষে গোটা গ্রাম একটি পরিবার হয়ে ওঠে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। নবমীর দুপুরে এলাকার কারও বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে না। পুজো মন্ডপ লাগোয়া চত্বরে বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে দেওয়া চাল, সবজির সঙ্গে প্রয়োজন মত ডাল, তেল-সহ অন্য সামগ্রী কিনে রান্না হবে। একসঙ্গে কলা পাতার থালা নিয়ে বসবেন পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা। এলাকার বাসিন্দা অরুণ রায় বলেন, “নিত্যকার দুর্গতির মাঝেও বছরের পুজো এক যন্ত্রণা মুক্তির আনন্দ।” |