অভাবেও ছেদ পড়েনি দেবীর আরাধনায়
পুজোর চার দিন সন্ধ্যায় ধামসা, মাদল আর ঢাকের তালে কোমর দুলিয়ে নাচ আর দিনভর হইহুল্লোড়। একদিন সকলে মিলে পেট পুরে খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়া। আনন্দের দিনগুলির গল্প মা আর ঠাকুমার কাছে ঘুমিয়ে পড়ে ঢেকলাপাড়া চা বাগানের শ্রমিক ঘরের সন্তান কিরণ, বিনয়, মঞ্জু, বিকাশ’রা। খোলা বাগান মানে যে কী তা তাঁরা জানে না। কেননা, ওদের বয়স ৮-১২ বছর। আর বাগান বন্ধ হয়েছে ১১ বছর আগে। আধ পেটা খাবার খেয়ে ওদের বেড়ে ওঠা।
প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ডুয়ার্সের ঢেকলাপাড়া চা বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনের প্রাইমারি স্কুলের মাঠে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে। পুজোর জন্য শ্রমিকরা চাঁদা দিতেন। বাগানের মালিক পক্ষ পুজোর জন্য যা টাকা খরচ করতেন তা দিয়ে হইহুল্লোড় করে কাটত ৪টি দিন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় ২০০২ সালের অগস্ট মাসে।
বাগান বন্ধ হওয়ার পরে এখন বাগানে শুধু শ্রমিকরা। অনাহার, অর্ধাহারে জেরবার হয়ে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে পুজোর সময় ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় বা ভাল মন্দ খাবার মুখে তুলে দেবার চিন্তা না করেও শত দুর্দশার মধ্যেও পুজো বন্ধ করেননি ঢেকলাপাড়ার শ্রমিকেরা। পাতা তোলার টাকা থেকে কিছু টাকা রেখে আর বাইরে থেকে চাঁদা তুলে কোনওমতে চলছে পুজো।
ঢেকলাপাড়ায় পুজোর প্রস্তুতি। ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।
প্রতিবারই সবাই প্রার্থনা করেন, আগামীবার যেন দেবী এক দশা কাটিয়ে দেন। বাগানের পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ তথা আরএসপি নেতা মুকেশ খড়িয়া বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পুজো হয়ে আসছে। পুজো হবে না এটা কেউ মানতেই পারেন না। দেবী যাতে মুখ তুলে আমাদের দিকে তাকায় সেই আশায় প্রতিবারই সকলে মিলে সাধ্যমত পুজো করে চলেছি।” তিনি জানান, বাঁশের সঙ্গে কাপড় দিয়ে মোড়া মণ্ডপ তৈরি আর বীরপাড়া থেকে প্রতিমা কিনতে যা খরচ তাতেই শ্রমিকদের থেকে তোলা টাকা প্রায় শেষ হয়ে যায়। আশেপাশে এলাকা থেকে চাঁদা তুলে কোনওমতে পুজোটা সারা হয়। ফল প্রসাদ খেয়ে এখন সকলকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ধামসা মাদল বাজিয়ে গান বাজনা আর হয় না।
শ্রমিকরা জানান, মাসে সরকারি অনুদান মেলে ১৫০০ টাকা। আর সারা মাস বাগানের পাতা তুলে আরও ৮০০ টাকা। তাই দিয়ে এই বাজারে সংসার চালাতে হয়। বাগান শ্রমিক বিজো খড়িয়া র সংসারে তিন সন্তান ও স্ত্রী। তাঁর স্ত্রী পুকলি দেবীর কথায়, মাঝেমধ্যে ১০০ দিনেরও কাজ মেলে। নতুন জামা কাপড়ও ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিতে পারব না। আরেক শ্রমিক রামু ওঁরাও বলেন, “জংলি কচু আর ঢেকি শাক সেদ্ধ আর ভাত খেয়ে বছরের পর বছর কাটাচ্ছি। পুজোর পুরানো গল্প ছেলেমেয়েদের শোনানো হয়। আর ভাবি কবে মা আমাদের পুরানো দিন ফিরিয়ে দেবেন।”
দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর ডুয়ার্সের রামঝোরা চা বাগান ২০১০ সালে চালু হয়েছে। বাগানটি রুগ্ন হওয়ায় অন্য বাগানের শ্রমিকেরা ৯৫ টাকা মজুরি পেলেও এই বাগানের শ্রমিকেরা পান ৮২ টাকা। অন্য বাগানে বোনাস ২০ শতাংশ হলেও এই বাগানে ১২ শতাংশ। তবে ভাঁটা পড়বে না বাগানের পুজোয়। শ্রমিকদের চাঁদা এবং মালিকদের অংশগ্রহণেই পুজো হবে। থাকবে তিনদিন খিচুড়ির ব্যবস্থা। বাগানের বাসিন্দা রমেশ শর্মার কথায়, “আট বছর বাদে মা আমাদের দিকে চোখ তুলে চেয়েছেন। তাই সাধ্যমত চেষ্টা করা পুজো করা হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.