অভিমান ভেঙে পুজোর আনন্দে
সামিল মাথাভাঙার অসুররাও
খালি গা। কালো কুচকুচে শরীর। কোমর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত নেংটির ঢঙে সাদা রঙের একটি ধুতি প্যাঁচানো। বুকের ছাতি যেন পাহাড়ের পাথরের মতো শক্ত। ইনি ঢালু অসুর।
বয়স কত? হবে বড় জোর চল্লিশ। হাসতে হাসতে এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, “এখন আর দুর্গার উপর আমার কোনও রাগ নেই। সে সব কবেকার কথা। এতদিন রাগ পুষে রাখলে চলে? এখন ওঁর পূজার চাঁদাও দিই। ছেলেমেয়েদের নতুন জামাও কিনে দিই। কী করব! প্রতিবেশীরা সবাই নতুন জামাকাপড় পড়ে উৎসবে মেতে ওঠে যে!”
পাশেই দাঁড়িয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমিতা অসুর। তার মুখখানাও হাসি হাসি। পুজোয় এ বার মিলবে নতুন জামা। আর বেশি দেরি নেই।
মাথাভাঙার ইন্দ্রেরকুঠি গ্রামের অসুর জনজাতির
লোকেরা। হিমাংশু রঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ ভেঙে দুর্গাপুজোর আনন্দে মাতছেন ‘অসুর’ জনজাতির মানুষরা। কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার কেদারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দ্রেরকুঠি গ্রামে অসুরদের বাস। সব মিলিয়ে ১১ পরিবারের ৫০ জন সদস্য। তাঁদের ইতিহাস নিয়ে নানা তথ্য রয়েছে। কেউ বলেন তাঁদের আদিবাস ঝাড়খণ্ডে। কেউ বলেন তাঁদের পূর্ব পুরুষরা অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা ছিলেন। কবি ও লোক সংস্কৃতির গবেষক রণজিৎ দেব জানান, ইতিহাস ঘেঁটে তিনি যতটুকু জানতে পেরেছেন এই অসুরবংশীয় মানুষরা প্রাগজ্যোতিষপুরের অসমের একটি অংশ এবং উত্তরবঙ্গের একটি অংশ নিয়ে নিয়ে তৈরি হয়েছিল। প্রাগজ্যতিষপুরের সে সময় সেখানকার রাজা ছিলেন নরকাসুর। তাঁরা মূলত শিবের ভক্ত। ইন্দ্রের কুঠি ছাড়াও ডুয়াসের ক্যারন চা বাগান-সহ কয়েকটি এলাকায় অসুরবংশীয়রা রয়েছেন।
কয়েক বছর আগেও দুর্গা পুজোর নাম শুনলেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতেন ওই জনজাতির মানুষরা। পুজোর চাঁদা দেওয়া, নতুন জামাকাপড় পরা তো দূরের কথা, ওই চারদিন ঘরবন্দি হয়ে তাঁরা। ষাট বছরের বৃদ্ধ আগনু অসুর বলেন, “অসুর বংশ শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল সেই যুগে। তার একটা প্রতিবাদ আমরা করি। এখনও আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এক রাজা ঝাড়খণ্ডে রয়েছেন। তিনি এমন জায়গায় আছেন কেউ দেখতে পাচ্ছেন না।”
আগনুর মতো বৃদ্ধরা এখনও কিছুটা অভিমান নিয়ে পঞ্চমীর দিন ঘরবন্দি হয়ে থাকেন। পরের তিন দিন অবশ্য তাঁরা বের হন। কিন্তু ছোটরা পঞ্চমীর দিন থেকেই সামিল হয় পুজায়। দশম শ্রেণির ছাত্র রাজেশ অসুর, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বুধান অসুর বলেন, “অসুর-দেবতা যুদ্ধের কথা আমরা বড়দের কাছে খানিকটা শুনেছি। মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। আমি যতদূর বুঝেছি মহিষাসুর খারাপ কিছু করেছিলেন। সে জন্যই যুদ্ধ হয়। কিন্তু, অসুরদের সবাই খারাপ নয়। তাই দুর্গা পুজোয় আমরাও আনন্দ করি, ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়ি।”
কেমন আছেন অসুরবংশীয়রা? দিনমজুরি এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। একদিন কাজ না হলে আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। পরিবারের বাসিন্দাদের কারও পাটকাঠির বেড়া দেওয়া, কারও টিনের চালা দেওয়া বাড়ি। এত সবের পরেও বিপিএল তালিকায় নাম নেই। অনেকের দু’বছর আগে ১০০ দিনের কাজ মিলেছিল ১৫ দিনের জন্য। আর কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধে পাননি। কেউ জননী সুরক্ষা প্রকল্পের নাম শোনেননি। গ্রাম থেকে দুই কিলামিটার দূরে একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তার উপরেই নির্ভর করেন অসুররা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.