|
|
|
|
ঘর গোছাতে গিয়ে ঘরেই জেরবার রাজ্য সিপিএম
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
লোকসভা ভোটের ঢাকে প্রায় কাঠি পড়ে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই দু’দিনের বৈঠক থেকে লোকসভা ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিতে হাত দিতে চাইছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। কিন্তু তার জন্য ঘর গুছোনোর আগে ঘরের সমস্যাতেই জেরবার আলিমুদ্দিন!
সদ্য ১২টি পুরসভার ভোটের ফলের প্রাথমিক রিপোর্ট ৬-৭ অক্টোবরের পলিটব্যুরো বৈঠকে পেশ করবেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। পঞ্চায়েতের মতো পুরভোটেও শাসক দলের সন্ত্রাস ও জবরদস্তির ফলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি, এই অভিযোগই শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবে আলিমুদ্দিন। কিন্তু বর্ধমান ও চাকদহ পুরসভায় ভোটের দিন লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো ঠিক হয়েছিল কি না, তা নিয়ে রাজ্য সিপিএম এখনও অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। দলের রাজ্য নেতৃত্বই এই প্রশ্নে আড়াআড়ি বিভক্ত! এই অবস্থায় বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের দেওয়া রিপোর্ট রাজ্য সম্পাদক পলিটব্যুরোকে জানিয়ে দেবেন বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। বর্ধমান জেলা সিপিএমের দাবি, শহরে সে দিন তৃণমূল যে পরিস্থিতি করেছিল, তাতে প্রতিরোধ করতে গেলে রক্তক্ষয় হত। যা এই সময় কাঙ্খিত ছিল না।
আপাতত বর্ধমানের ব্যাখ্যা সামনে রেখে মুখরক্ষার উপায় খোঁজা হলেও পরের রাজ্য কমিটির বৈঠক এই প্রশ্নেই উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেই প্রার্থী তোলার প্রশ্নে দু’টি মত রয়েছে। একাংশের মতে, তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশন কোথাওই অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার মেলেনি। ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়ে এর মধ্যেই একটা বার্তা দেওয়া গিয়েছে। বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তৃণমূলের এই জয়ে ‘বৈধতা’ নেই। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বেরই অপর অংশের বক্তব্য, সন্ত্রাসের কথা বলে ময়দান থেকে সরে যাওয়ায় জনমানসে এই বার্তাই গিয়েছে যে, সিপিএম রণে ভঙ্গ দিল! পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণবঙ্গে তুলনামূলক ভাল ফল করেছিল নদিয়া জেলা সিপিএম। সেই জেলা নেতৃত্বই চাকদহে কেন বর্ধমানের রাস্তা নিলেন, এই নিয়েও দলে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, নদিয়া জেলা সিপিএমের অন্দরেও কেউ কেউ বিস্মিত! প্রসঙ্গত, নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে পুরভোটের দিন রাজ্যের বাইরে ছিলেন।
এমতাবস্থায় পরবর্তী রাজ্য কমিটির বৈঠক বসবে পুজোর পরে। সাংগঠনিক মূল্যায়ন নিয়েই সেই বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। তার আগে বিভিন্ন জেলা কমিটি বৈঠক ডেকে এখন সাংগঠনিক ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ করছে। কিন্তু তাতেও বিপত্তি! নির্দিষ্ট কী মাপকাঠিতে কোনও কমিটি থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হবে, তা ঠিক না থাকায় জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এসএফআইয়ের বর্ধিত সভা ডেকে এক ধাক্কায় বাদ দেওয়া হয়েছে জেলা কমিটির ১৮ জন সদস্যকে। অভিযোগ, এঁরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু মেদিনীপুর শহরেই ছাত্র ও যুব সংগঠনে ওই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকেই দলের হয়ে কাজ করতে চাইছেন না। প্রতিবাদীদের পাল্টা অভিযোগ, নিষ্ক্রিয়তার কথা বলে তাঁদেরই ছেঁটে ফেলা হয়েছে, যাঁরা জেলা রাজনীতিতে দীপক সরকারের পছন্দের শিবিরের নন! ছেঁটে ফেলার আগে তাঁদের সতর্ক করে কোনও সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
লোকসভার ভোটের প্রস্তুতির আগে জল আরও ঘোলা করে দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ। দু’টি লোকসভা আসনে লড়ার কথা ঘোষণা করার পাশাপাশি গত বিধানসভায় হারের জন্য সিপিএমের দিকেই আঙুল তুলেছেন কিরণময়বাবুরা। জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বুধবার বলেছেন, “উনি বহু বছর বিধায়ক এবং টানা বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। যখন জিততেন, কেউ কি বলেছিলাম সিপিএমের জন্য জিতেছেন? জিতলে বামফ্রন্টের জয় এবং হারলে বামফ্রন্টের পরাজয়, এ ভাবেই আমরা দেখে এসেছি।” গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন, গৌতম দেব বা শরিকদের মধ্যে ক্ষিতি গোস্বামী, নরেন দে-রাও হেরেছেন। কিন্তু তার জন্য সিপিএমকেই প্রকাশ্যে হেয় করা বামফ্রন্ট-সুলভ নয় বলেই আলিমুদ্দিন মনে করছে। |
|
|
|
|
|