টানা বৃষ্টিতে হাবুডুবু রাঢ়বঙ্গের পুজোবাজার
যেন অকাল বোধনের সঙ্গে অকাল বর্ষণ! সেই শনিবার থেকে আকাশের মুখ ভার। তামাম দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাঢ়বাংলার দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় তায় কপালে হাত ব্যবসায়ীদের। গৃহস্থেরও তাই অবস্থা। বাজারে বেরোবেন কি! দিনরাত ঝমঝম বৃষ্টি। ভিজলেই যে জ্বর-সর্দি লেগে পুজোটা বিছানাতেই কাটাবে। কিন্তু বাড়ির লোকেদের পোশাক কেনাও যে বাকি। বৃষ্টি ভেজা রবিবারের মতোই গাঁধীজয়ন্তীর বুধবারের ছুটিও তাই বাজারে না গিয়ে অনেকে বৃষ্টি থামার আশায় দিনভর গৃববন্দি হয়েই কাটলেন। কিন্তু বৃষ্টির বিরাম নেই।
আবহাওয়া দফতরের পুরুলিয়ার পরিমাপ কেন্দ্র জানাচ্ছে, শনিবার থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত এই জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯৯.৪ মিলিমিটার। তার মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত, ৮২ মিলিমিটার। বাঁকুড়া জেলায় গত শুক্রবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত এখানে ১০১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ক্রেতার অপেক্ষায় বাঁকুড়া শহরের ব্যবসায়ীরা।
বৃষ্টি চলছে কখনও ঝিরঝির, কখন ঝমঝমি গতিতে। ফলে পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, কাশীপুর, বলরামপুর, মানবাজারের রাস্তা প্রায় ফাঁকা। বাসে-ট্রেনেও যাত্রী হাতেগোনা। পুজোর আগে শনিবার ও রবিবার ভাল বাজার পাবেন বলে আশা করেছিলেন পুরুলিয়া শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। চাইবাসা রোডের একটি রেডিমেড পোশাক বিক্রেতা অশোক সারাওগির আক্ষেপ, “শনিবার দুপুর থেকে বৃষ্টি নামায় বাজারে অল্প কিছুও ক্রেতা ছিলেন। ভেবেছিলাম বৃষ্টি থেমে যাবে। রবিবার থেকে বাজার জমবে। কিন্তু বৃষ্টি কিছুতেই থামছে না। ক্রেতা যদি বা কিছু আসছেন, তাঁরা ছাতা আর রেনকোটের খোঁজ করছেন।” ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অন্য বছরে মহালয়ার আগে এই সময়ে ২৫ শতাংশ বিক্রিবাটা হয়ে যায়। এ বার তাঁদের মাছি তাড়ানোর অবস্থা!
কাপড় গলির ব্যবসায়ী সমীর হালদার বলেন, “অন্য বছরে পুজোর আগে গাঁধী জয়ন্তীর দিনে আমাদের রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। এ বার বিক্রিতে ভাটা পড়ার রেকর্ড হয়েছে।” চাইবাসা রোডের অন্য এক ব্যবসায়ী শ্রীপদ সিংহের বক্তব্য, “টানা পাঁচ দিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টি পড়ছে। এ বার পুজোয় আমাদের জন্য যে কী অপেক্ষা করছে, কে জানে?”
পুরুলিয়ার কাপড়গলিতে বৃষ্টিতে নাজেহাল ক্রেতারাও।
একই ছবি বাঁকুড়ার বড়জোড়া থেকে খাতড়া, বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর থেকে সারেঙ্গায়। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলয় রাস্তার পাশে ছোট্ট রেডিমেড পোশাকের দোকান রয়েছে মধুসূদন চন্দের। তাঁর আক্ষেপ, “বড়বাজার, হাতিবাগান ও হাওড়ার মঙ্গলার হাট থেকে বেছে বেছে পোশাক কিনে এনেছিলাম। কিন্তু গাঁ-গঞ্জের তো নয়ই, শহরের ক্রেতারাও বৃষ্টির জন্য দোকানমুখো হচ্ছেন না। দেনা করে পোশাক কিনে এনে এখন লোকসানের ভয় পাচ্ছি।” সুভাষ রোডের রেডিমেড ব্যবসায়ী সুব্রত সেন বলেন, “পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই বাজারে ভিড় শুরু হয়েছিল। তা দেখে ভেবেছিলাম এ বার বেশ ভাল ব্যবসা হবে। কিন্তু বৃষ্টিই আমাদের ডুবিয়ে দিল।” ব্যবসায়ীদের চিন্তা, এত জিনিসপত্র মজুত করার পরেও ক্রেতারা যদি না আসেন, সে ক্ষেত্রে এত নতুন ডিজাইনের পোশাক বিক্রি করা পরে মুশকিল হয়ে পড়বে। দোকানে যেতে না পারায় প্রকৃতিক উপর বেজায় চটেছেন ক্রেতারাও। পুরুলিয়ার আমডিহার বধূ গীতা কুণ্ডুর আক্ষেপ, “মাস পয়লা থেকেই তো বৃষ্টি। বাজার আর করব কী ভাবে!” তাঁর সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন বিষ্ণুপুর বকুলতলার তরুণী সোমা পাল বলেন, “পুজোর কেনাকাটা কিছুটা হলেও ভেবেছিলাম পুজোর আগে বাকিটা শেষ করব। কিন্তু এই বৃষ্টি আর বজ্রাপাতের ঘনঘটায় বাড়ির বাইরে বের হতে পারছি না।” এ দিকে, বুধবার সন্ধ্যায় ঝালদা-আড়শা রাস্তায় বেগুনকোদরের কাছে কংসাবতীর কজওয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছে। এর ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.