চাঁদায় টান, রাতে ঘুম ছুটেছে
বারোয়ারি পুজো কর্তাদের
জোর করলে বলা হবে ‘জুলুম’। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, পুজোর জৌলুস কমলে বলা হবে ‘ব্যর্থ’। শাঁখের করাতে পুজো কর্তারা। শুধু কৃষ্ণনগর নয়, নদিয়ার বেশিরভাগ বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তাদের অবস্থা একই রকম।
এদিকে হাতে রয়েছে মাত্র একটা রবিবার। তার পরেই পুজো! এটা ভাবতেই এক লাফে রক্তচাপ যেন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগরের পোড় খাওয়া এক পুজো কর্তার। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানের কাঠের বেঞ্চে চায়ের কাপটা ঠক করে রেখে বিড়বিড় করেন ওই কর্তা, “কী ভাবে কী করব বলুন তো? চাঁদা তো উঠেছে নামমাত্র।” দেবগ্রামের এক বাসিন্দা বলছেন, “পাড়াতেই পুজো হয়। বাজেট থেকে শুরু করে গত বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব সবই কানে আসে। ফলে এ বার যা অবস্থা তাতে পুজোর বাজেট না বাড়িয়ে উপায় নেই। কিন্তু পাড়ার ছেলেরাই যখন বিল বই নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে তখন সব জেনেও চাঁদা কম নেওয়ার অনুরোধ করতেই হচ্ছে। খরচ বাড়লেও আয় বাড়েনি।”
শান্তিপুর মিউনিসিপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলোর উচিত পুজোর হিসাব সাধারণ মানুষকে জানানো। এতে পুজো কমিটির ভাবমূর্তি যেমন আরও উজ্জ্বল হয়। তেমনি মানুষও মনে করেন তিনিও ওই পুজোর একজন।”
বেথুয়াডহরি খিদিরপুর মধ্যপাড়া টাউন ক্লাবের গত বছর বাজেট ছিল ৩ লক্ষ টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ। পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ অমিত সাহা বলেন, “অনেক চেষ্টা করেও বাজেট এর নীচে রাখা গেল না। অথচ চাঁদা বাড়ানো যাচ্ছে না। অবস্থাটা বুঝতে পারছেন?”
এমনটা হচ্ছে কেন? এলাকার কয়েক জন পুজো কর্তা বলছেন, “বাজেটের যা বহর তাতে চাঁদা বাড়াতেই হচ্ছে। আর বিল বই নিয়ে পাড়ায় বেরোলেই শুনতে হচ্ছে, “গতবার যা ছিল এ বারও তাই। একটা পয়সাও কিন্তু বেশি দিতে পারব না।” পাশাপাশি পুজো কর্তারা এটাও কবুল করছেন, “ জিনিসপত্রের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছে সেই অনুপাতে মানুষের আয় তো বাড়ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে তাঁদেরও তো পুজোর কেনাকেটা আছে।”
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজির কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। কোথাও যাতে জুলুম না চলে সে ব্যাপারে পুলিশ কড়া নজর রাখছে। অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
বাদকুল্লার অনামী ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ হিমাদ্রি পালের কথায়, “মফস্সলের পুজোগুলোতে সে ভাবে বিজ্ঞাপন জোটে না। পুরোটাই ভরসা করতে হয় চাঁদার উপর। এ দিকে, চাঁদার যা অবস্থা তাতে রীতিমতো আশঙ্কার মধ্যে আছি। পাড়াতে পুজো করছি আর পাড়ার মানুষের খবর রাখব না তা হয় নাকি? ফলে কাউকেই কিছু বলতে পারছি না। যে যা দিচ্ছে তাই নিয়ে নিচ্ছি। সত্যিই এবার খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম মনে হচ্ছে।”
তাহলে পুজোটা হবে কী করে? শত সমস্যার মধ্যেও হাসতে হাসতে করিমপুরের এক পুজো কর্তা বলছেন, “এক্ষেত্রেও ভরসা সেই মা দুর্গাই।”
ঘূর্ণির তরুণ সংঘের সৈকত বিশ্বাস যেমন বলেন, “গত বছর আমাদের বাজেট ছিল ছয় লক্ষ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত লক্ষ। এই বাড়তি এক লক্ষ টাকার ঘাটতি কিভাবে মিটবে তা নিয়ে সকলেই খুব চিন্তায় ছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে মোট তিনশো সদস্য আরও তিনশো টাকা করে বেশি চাঁদা দিয়ে ওই ঘাটতি মেটাবেন।” রাখে দুগ্গা মারে কে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.