পুজোর সময় সকলের থেকে একটু আলাদা সাজতে কে না চায়। কিন্তু বড় দোকান বা মলে একই পোশাক মেলে নানা মাপে। অন্য রকমের, সকলের থেকে আলাদা পোশাক এত দিন মিলত বড় ফ্যাশন ডিজাইনারদের বুটিকে। তাও কলকাতার মতো শহরে। এলাকার বাসিন্দাদের সেই শখ মেটাতে মফস্সলেও এ বার বাজার ধরছে স্থানীয় বুটিক।
দু’তিন বছর আগের কথা। কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নবদ্বীপ-সহ বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিল ছোট ছোট অনেক বুটিক। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কৃষ্ণনগরের সুপার্থ সাহা-দীপান্বিতা সাহা, বা নবদ্বীপের পাপড়ি মণ্ডল, সরোজ রায়রা পুজোর মরসুমে নিজের বুটিকে জমিয়ে ব্যবসা করছেন। তাঁরাই জানান, এ বছর এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা আগ্রহী বুটিকের পোশাক নিয়ে। আগে ফ্যাশন সচেতন কম বয়সী মেয়েরাই ভিড় জমাতেন বুটিকগুলিতে। কিন্তু গত বছর থেকে ছবিটা বদলে গিয়েছে বিলকুল। “লক্ষ্য একটাই। আমি যে পোশাক পরব তা সকলের থেকে আলাদা হবে।” বলছিলেন কৃষ্ণনগরের সুপার্থ ও দীপান্বিতা সাহা। |
কৃষ্ণনগরের একটি বুটিক। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
প্রায় বছর দশেক ধরে বুটিক চালাচ্ছেন সাহা দম্পতি। সুপার্থবাবু বলেন, “কলকাতার ফ্যাশনকে নকল করলে মফস্সলে বুটিক চলবে না। কারণ স্থান-কাল ভেদে পছন্দও বদলে যায়। এলাকার মানুষের রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বানাতে হয় পোশাক। অনেক সময় ক্রেতা যেমন চান সেই অনুযায়ী সালোয়ার বা শাড়িতে কাজ করা হয়।” এ বছর বুটিকের ক্রেতারা সবথেকে বেশি কী চাইলেন?
নবদ্বীপের বুটিক দোকানের মালিক সরোজ রায় জানান, “শাড়ির ক্ষেত্রে নেট আর ব্রোকেডের চাহিদা এ বছর রয়েছে। ব্রোকেডের সঙ্গে ঘিচা স্টিচের উপর এমব্রয়ডারি বা ব্রোকেডের সঙ্গে সাউথ সিল্কের উপর স্টোন ওয়ার্ক। ২৫০০ টাকা থেকে দাম শুরু।” নবদ্বীপের পাপড়ি মণ্ডল বলেন, “এ বার বাংলাদেশি এক রঙা থানের উপর কাজ করছি। হাল্কা বা গাঢ় দুই রকমের রঙ ব্যবহার করছি। বাংলাদেশি তাঁতের সঙ্গে রোঁয়া সুতো মেশানো থাকে। ফলে এই কাপড় স্টাইলিশ চেহারা নেয়। দাম ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত।” পার্সি স্টিচ, অ্যাপ্লিক, ওপারা পাড়ের ব্যবহার করে মটকা, ঘিচা, ভাগলপুরি সিল্কের উপর কাজ করছেন দীপান্বিতাদেবী। বলেন, “ঘিচা ও ব্যাঙ্গালোর সিল্কের উপর কাজ ১৫০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে। কেরল কটনের উপর মধুবনি কাজ বা লোকসংস্কৃতির মোটিফও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।”
শাড়ির সঙ্গে এ বছর ‘ইন’ আনারকলি সালোয়ার কামিজ। পশ্চিমী ধাঁচের পোশাককে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়েছে মুঘল আমলের এই পোশাক। এই নিয়ে পরপর তিনটে পুজোয় পছন্দের অন্যতম আনারকলি সালোয়ার কামিজ। তিন বছর আগে কলকাতার নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনারদের বুটিকে প্রথম দেখা মিলেছিল বড় ঘেরের আনারকলির সালোয়ারের। তিন বছর পর সেই সালোয়ার মফস্সলের বুটিকগুলিতেও।
বুটিক যে মফস্সলে জনপ্রিয় হচ্ছে তার প্রমাণ মিলল স্থানীয় বুটিক মালিক তপোলব্ধা ভট্টাচার্যের কথাতেই। তিনি বলেন, “অনেক নতুন ক্রেতা আসছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে পোশাক নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। বাজেটের মধ্যেই মিলবে বুটিকের পোশাক।” |