|
|
|
|
কেলেঘাই প্রকল্পের কাজে গতি আনতে আজ বৈঠক
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
পালাবদলের পর উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজে গতি আনার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদীর নিকাশি প্রকল্পের কাজ যেন আর এগোতেই চাইছে না। এ বিষয়ে সম্প্রতি কংগ্রেসের থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রকল্পের ব্যপারে খোঁজখবর নেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নজরে আসে, ২০১১-১২ সালে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া সেচমন্ত্রী থাকাকালীন কাজের অগ্রগতি যে হারে হয়েছিল, পরবর্তীকালে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেচমন্ত্রী হওয়ার পর তা যথেষ্ট কম। এখন যা অবস্থা তাতে ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা যে অসম্ভব তা মানছেন সেচ দফতরের কতার্রাও। গোটা বিষয়টিতে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী সেচমন্ত্রীকে ডেকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে আজ, বৃহস্পতিবার হলদিয়া ভবনে বৈঠকে বসছেন দুই মেদিনীপুরের জেলাশাসক, সভাধিপতি, সেচ দফতরের কর্তা, স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ ও সেচমন্ত্রী।
২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার কাজের শিলান্যাস করতে এসে দু’বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের মূল নদী কেলেঘাইয়ের ৬৩ কিলোমিটার, চণ্ডিয়া নদীর ২৪ কিলোমিটার, কপালেশ্বরী নদীর ২১ কিলোমিটার, বাগুই নদীর ২৪ কিলোমিটার ও দেউলি নদীর ৯ কিলোমিটার অংশে সংস্কার হওয়ার কথা। কিন্তু গত দু’বছরে কেলেঘাই নদীর কাজ হয়েছে মাত্র এগারো কিলোমিটার। কপালেশ্বরী নদীর কাজ আগেই শেষ হলেও বাকি তিনটি নদীর কাজে এখনও হাত দেয়নি সেচ দফতর। |
|
তখনও সেচমন্ত্রী ছিলেন মানস ভুঁইয়া। কাজ হচ্ছিল জোরকদমে।—ফাইল চিত্র। |
যদিও দুই মেদিনীপুরের প্রায় পঁচিশটি খাল সংস্কারের কাজ প্রায় শেষের পথে বলে দাবি সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের। ৬৫০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার এই প্রকল্পের কাজে অর্থ পাওয়া নিয়েও কোনও সমস্যা হয়নি বলে তাঁদের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুর অংশে প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব সেচ দফতরের তমলুক ও কাঁথি বিভাগের হাতে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর অংশে কাজের জন্য ‘কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই প্রকল্প বিভাগ’ নামে একটি নতুন বিভাগের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কে কে বি পি বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মণ্ডল জানান, ২৭ কোটি টাকায় কপালেশ্বরী নদীর ২১ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। এলাকার ১৩টি খালের ৮৯ কিলোমিটার অংশে সংস্কার হয়েছে। নদী ও খালের উপর মোট ছ’টি সেতু তৈরির কাজ চলছে। দেউলি নদীর সাড়ে ৯ কিলোমিটার অংশে সংস্কারের জন্য ১৮ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার দরপত্র দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগকে কেলেঘাই নদীর ৩৪ কিলোমিটার অংশেও সংস্কারের কাজ করতে হবে। অঞ্জনবাবু জানান, প্রথম দফায় প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে কাজের জন্য ২৩ কোটি টাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “জমি অধিগ্রহণের সমস্যা কাটছে। বর্ষার পরে জোরকদমে কাজ শুরু করা হবে।” তমলুক বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বান ভট্টাচার্য বলেন, “৩ কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় ৭ কিলোমিটার ময়না নিউ কাট চ্যানেল খনন হয়েছে। চণ্ডিয়া নদীর আট কিলোমিটার অংশের কাজও প্রায় শেষ। কেলেঘাই নদীর চার কিলোমিটার অংশের কাজ করা হয়েছে। এই বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাকি ৯ কিলোমিটার অংশেও সংস্কারের কাজ হবে। চণ্ডিয়া নদীর উপর ৮ কিলোমিটার অংশে কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চণ্ডিয়া নদীর উপর শ্রীধরপুর, এজমালিচক ও চাঁদিবেনিয়ায় তিনটি পাকা সেতু তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। অনির্বানবাবুর দাবি, “কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক।”
প্রকল্পের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেচ দফতরের কাঁথি বিভাগের। ওই বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্বপনকুমার পণ্ডিত জানান, ইতিমধ্যে কেলেঘাই নদীর চাবুকিয়া থেকে নাঙলকাটা পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশে কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নাঙলকাটা থেকে সেলমাবাদ পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার অংশের কাজও হবে। বাগুই নদীর প্রায় ৮ কিলোমিটার অংশে সংস্কার ও নতুন বাঁধ তৈরির জন্য কাজের বরাত দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়নি। স্বপনবাবু বলেন, “জমি অধিগ্রহণের আগে প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য জমি মালিকদের থেকে প্রাথমিক সম্মতি পাওয়া গিয়েছে।”
তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, “প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। পূর্ব মেদিনীপুর অংশে কাজের অগ্রগটি ভালই হয়েছে। পশ্চিমে ততটা হয়নি। প্রকল্পের কাজের সুফল মানুষ পাচ্ছেন।” তবে সাংসদ, ইঞ্জিনিয়াররা যা-ই বলুন না কেন, স্থানীয় মানুষের বাধা, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণজনিত সমস্যার জন্য প্রকল্পের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের মূল কাজগুলি ছাড়াও স্লুইস গেট, ইনলেট নির্মাণ ও পুনর্গঠন, বাঁধ উঁচু ও সংস্কার করার কাজও বাকি রয়েছে। এ ছাড়াও কেলেঘাই নদীর জল ধরে রেখে শুখা মরসুমে চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য মাধবচক ও উত্তরবাড় মৌজার মাঝে রাবার ড্যাম তৈরির কাজও পড়ে।
প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি। এছাড়া কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেন্দ্র সরকারের দেওয়া বিপুল পরিমাণ টাকার সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “নদীর একাংশ ও খালগুলির কিছুটা সংস্কার হলেও মাটি সরানো হয়নি। বাকি খালপাড় বাঁধানোর কাজও। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাও দূর করতে পারেনি প্রশাসন।” বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ডাক না পাওয়ায় ক্ষোভও জানিয়েছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “বৈঠকে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনার পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েও আলোচনা হবে।”
|
পুরনো খবর: কাল সূচনা কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের |
|
|
|
|
|