|
|
|
|
গবেষণায় সাফল্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের |
নদী-ভাঙন রোধ সম্ভব বিশেষ গাছ ব্যবহারে
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
প্রাকৃতিক ভাবে নদীবাঁধের ভাঙন রুখতে গবেষণায় সাফল্য পেল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। এমনটাই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তথা গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অমলকুমার মণ্ডল-সহ ১১ জনের গবেষক দলের। অমলবাবু বলেন, “মাঝে মধ্যে সরকারি উদ্যোগে নদীর পাড় বাঁধা হলেও অধিকাংশ সময়ই তা স্থায়ী হয় না। অথচ, প্রাকৃতিক ভাবে এবং অনেক কম খরচে স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ সম্ভব। পাঁচ বছরের বেশি সময় গবেষণা চালিয়ে আমরা সেই সাফল্য পেয়েছি।”
শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, সারা দেশেই নদী ভাঙন একটা বড় সমস্যা। প্রতি বছরই নদীর পাড় ভেঙে বহু চাষযোগ্য জমি, বসত বাড়ি তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। নষ্ট হয়ে যায় নানা প্রজাতির ঘাস ও গাছ। কিন্তু কী ভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে ওই ভাঙন রোধ করা সম্ভব?
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের দাবি, গবেষণায় দেখা গিয়েছে নদীর পাড় বা বাঁধের ক্ষয় রোধে কাশ, কুশ, সর, ইরাগ্রসট্রিস সায়ানইডিস ইত্যদি প্রজাতির গাছ নদীর পাড়ে লাগালে সেগুলি নদীর পাড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রাখে। গাছগুলি লম্বায় সাধারণত দশ-বারো ফুট হলেও মাটির নীচে চলে যায় প্রায় ২০-২৫ ফুট। ফলে ওই শেকড় মাটির অভ্যন্তরকে যেমন আঁকড়ে ধরে রাখে তেমনি মাটির উপরি ভাগকেও দৃঢ় করে। |
|
কংসাবতী নদীর পাড়ে ভাঙন রুখতে লাগানো হয়েছে কাশ। —নিজস্ব চিত্র। |
এই গাছগুলির মূল শেকড়ের তুলনায় গুচ্ছ শেকড় বেশি। অমলবাবু জানান, প্রথমে নদীবাঁধের উপর এই ধরনের ঘাস লাগানোর পর বিলিতি বাবলা, একাশিয়া ও প্যান্ডানাস জাতের গাছ লাগাতে হবে। এই দুই ধরনের ঘাস ও গাছ লাগানোর ফলে নদীবাঁধের বা পাড়ের ভিতর ও বাইরের অনেকটা শক্ত হয়। এ ছাড়াও ঘাসগুলি গ্রামেনি বা পোয়েসি গ্রোত্রের অঙ্গজ জননের দ্বারা বংশ বিস্তার করতে পারে। এমনকী ওই গাছগুলি বেশি দিন জলে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না। জল কমে গেলে ফের উদ্ভিদের গোড়া থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। ফলে প্রতিকূল পরিবেশেও গাছগুলি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। পাশাপাশি গাছগুলির বাষ্পমোচনের হারও কম। ওই গবেষক দলের দাবি, কৃত্রিম ভাবে এবং বেশি খরচে নদীর বাঁধ সংরক্ষণের চেয়ে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওটা উদ্ভিদগুলির উপর নজর দিলে বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এবং কম খরচে নদীপাড়ের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। সরকার চাইলে তাঁরা পদ্ধতিগত সহযোগিতা করতে রাজি বলে জানান গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অমলকুমার মণ্ডল।
জানা গিয়েছে, সমুদ্রের পাড় ভাঙন রোধে ইউজিসির আর্থিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দল ওড়িশার ভিতরকোনিয়া, কোনার্ক, পুরী, এবং রাজ্যের শঙ্করপুর, দিঘা, মন্দারমণি প্রভৃতি এলাকায় সমীক্ষার পরে ৭৪০ কিলোমিটার সমুুদ্র পাড়ে ছাগলখুরি (আইপোমিয়া) জাতের গাছ লাগান। দেখা যায়, ওই এলাকাগুলিতে গাছগুলি ভাঙনরোধে করতে পেরেছে। যদিও ওই কাজ এখনও চলছে। সমুদ্র পাড় ভাঙন রোধে সাফল্য পেয়ে তাঁরা ওই একই পদ্ধতি নদী বাঁধ ও পাড় ভাঙন রোধে প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হন। সেই মতো মেদিনীপুর শহরের কাঁসাই নদীর পাড়ে তা লাগিয়ে সাফল্য পান। চার বছর পরেও সেই অংশের পাড় এখনও দিব্যি রয়েছে। তবে তাঁদের অভিযোগ, নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার সময় অনেক সময় ওই সব ঘাসকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। গবেষক দলের বক্তব্য, সরকারি নজরদারি থাকলে এমনটা হত না।
অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্থান, আফগানিস্থান, আমেরিকা-সহ বিদেশের নানা এলাকায় এমনই প্রাকৃতিক উপায়ে নদীর পাড় রক্ষা হচ্ছে বলে দাবি অমলকুমার মণ্ডলের। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদ্ভিদবিদ্যা সম্মেলনে অষ্ট্রেলিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে প্রাকৃতিক ভাবে সমুদ্রের পাড়ের ভাঙন রোধে ছাগলখুরি’র (আইপোমিয়া) উপকারিতা তুলে ধরা হয়।”
সেচ দফতরের অধীক্ষক বাস্তুকার সুবীর লাহা বলেন, “প্রাকৃতিক ভাবে নদীর বাঁধের ক্ষয় রোধ সম্ভব। বিশেষ কিছু গাছ ব্যবহার করে নদীবাঁধের ভাঙন রোধ করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অসমের ব্রহ্মপুত্র নদী বাঁধে ওভাবে সাফল্য এসেছে। তাই ঠিক হয়েছে, প্রথমে ডেবরায় কংসাবতী নদীর বাঁধে ভ্যাটিভার (কুশ) ঘাস পরীক্ষামূলক ভাবে লাগানো হবে।” নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের মতে, “এমনটা করা গেলে নদী ভাঙন রোধ অনেকটাই সাফল্য মিলবে।” |
|
|
|
|
|