হাওড়ার আমতার নারিটে ভট্টাচার্য পরিবারে প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজো কখনও বন্ধ হয়নি। এমনকী, ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়েও উঁচু চৌকির উপরে দুর্গা প্রতিমা বসিয়ে, এক হাঁটু জলের উপরে দাঁড়িয়ে পুজো করেছিলেন পুরোহিত।
বহু ইতিহাস এবং আখ্যান জড়িয়ে আছে এই পুজোকে কেন্দ্র করে। কথিত আছে, ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে মুশির্দাবাদের দরবার থেকে নারিটে ভট্টাচার্য পরিবারে দুর্গাপুজোর ঠাকুর দালান নির্মাণ করার জন্য পাঁজার ইট পোড়াবার অনুমতি আনতে হয়েছিল। তারও আগে থেকে এই বংশে দুর্গাপুজো চলে আসছে বলে জানান ভট্টাচার্য পরিবারের প্রবীণ বংশধর শিশিরবাবু। ঠাকুর দালান সংস্কারের সময়ে ছাদে যাওয়ার গোপন সিঁড়ি ও সুড়ঙ্গ পথের নিদর্শন পাওয়া যায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বল্লাল সেনের আমলে কনৌজ থেকে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ পুরোহিত এসেছিলেন। তাঁদেরই একজন উঠেছিলেন হুগলিতে। |
ওই পুরোহিত রাজা রামমোহন রায়ের বংশধর বলে ভট্টাচার্য পরিবারের দাবি। শিশিরবাবু জানান, সে সময় এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় অনেক বেশি আড়ম্বর, জৌলুস ছিল। এখন আড়ম্বর কমলেও নিয়মকানুন, আচার-আচারণ সবই আগের মতো মানা হয়। এখন দুর্গাপুজোর সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে অন্নভোগ দেওয়া হয়। কুমারী পুজো এখন আর হয় না। পাঁঠাবলি পূর্বে ছিল, এখন বন্ধ। বংশ পরম্পরায় একই পরিবারের ঢাকি, কুমোর, কামার, নাপিত, পোটোদার, পুরোহিত এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে আসছে।
এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, দেবী দুর্গার ডান দিকে কার্তিক এবং বাঁ দিকে গণেশ। এ ছাড়াও, কলাবউ গণেশের পাশে নয়, থাকে কার্তিকের পাশে। ব্যবহার করা হয় শোলার মুকুট ও ডাকের সাজ। পুরনো সময়ে ভট্টাচার্য পরিবারে অষ্টমীর সন্ধিপুজো শুরু হত তমলুকের রাজবাড়ির সন্ধিপুজোর তোপধ্বনি শুনে। পরে ভট্টাচার্য পরিবারে সন্ধিপুজোর তোপধ্বনি হত। তা শুনে সন্ধিপুজো হত খড়িয়প রায়বাড়িতে। এখন এই তোপধ্বনি আর হয় না। ছোটবাড়ি ও বড়বাড়ি নামে দুটি পাশাপাশি ঠাকুর দালানে দু’টি দুর্গাঠাকুরের পুজো হয়। অংশগ্রহণ করেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা। |