বস্তায় না পুরে ধান ড্রামে রাখুন, মত বিশেষজ্ঞদের
খনও মাঠে ধান, ঘরে উঠবে দীপাবলির পরপরই। কিন্তু থাকবে কীসে? চাষিরা ধান রাখেন গোলায়, আর না হলে বস্তা করে মজুত করেন। সরকার ধান কিনে মজুত করে ওয়্যারহাউসে, কোথাও বা বিপুল পরিমাণ ধান খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল চাপা দিয়ে রাখা থাকে। বৃষ্টি, পাখি, ইঁদুর, পোকামাকড়, কোনও কিছুর থেকেই সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা থাকে না। ফলে গত পাঁচ বছরে অন্তত ৪৫ কোটি টাকার খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে পচে, কিংবা ইঁদুর বা পোকার উত্‌পাতে। যে রাজ্যগুলি নষ্টের পরিমাণে শীর্ষে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ সালের মধ্যে ২৩০০ মেট্রিন টন চাল-গম নষ্ট হয়েছে সরকারি ওয়্যারহাউসে। নানা ব্যক্তির তরফে তথ্যের অধিকার আইনের আবেদন থেকে সামনে এসেছে এই তথ্য।
কী করা যায় শস্যকে সুরক্ষিত ভাবে মজুত রাখতে? উপায় নির্ণয় করতেই সম্প্রতি একটি কর্মশালা হয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙাতে। সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন কর্তাদের তরফে আয়োজিত এই কর্মশালায় এলাকার ৪৫জন চাষি ছিলেন। চাষিরা জানালেন, চটের বস্তায় রাখা ৬০ কিলোগ্রাম ধানের মধ্যে ৭-১০ কিলোগ্রাম নষ্ট হয়ে যায়। বস্তায় করে বাড়ির বারান্দায় সাধারণত রাখা হয় ধান। তাতে জল লাগার ফলে ধান ‘চিটে’ হয়ে যায়, তা থেকে আর চাল হয় না। ছোট থেকে মাঝারি, সব চাষিই চেষ্টা করেন অন্তত ছয় মাস নিজের খেতের ধান বাড়িতে মজুত রাখতে। পুজোর মুখে অনেক চাষিই কিছু ধান বিক্রি করেন উত্‌সবের খরচ চালাতে। কিন্তু বর্ষার প্রকোপে তার কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, সামান্য কয়েকটি বিষয়ে নজর দিলে বাড়িতে মজুত রাখা ধান বাঁচানো যাবে। তাতে খরচও তেমন লাগবে না। যেমন, মাসে অন্তত এক বার রোদে ধান শুকোতে দিতে হবে। আর বস্তায় মজুত না রেখে, অ্যালুমিনিয়ামের বা ‘গ্যালভানাইজড’ টিনের (টিনের উপর দস্তার আস্তরণ দেওয়া) ড্রামে শস্য রাখলে তা কার্যত নষ্ট হবেই না।
কর্মশালায় ড্রাম বিতরণ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
সিডব্লুসি-র ম্যানেজার সনত্‌কুমার সিংহ চাষিদের জানালেন, গুরুত্বপূর্ণ হল ধানে জলীয় বাষ্প লাগতে না দেওয়া। চটের বস্তায় রাখলে তার সম্ভাবনা সব চাইতে বেশি, প্লাস্টিকের বস্তাতে রাখলেও তা সম্পূর্ণ এড়ানো যায় না। তাই প্রয়োজন টিনের ড্রাম। সেই ড্রাম স্বচ্ছন্দে স্থানীয় বাজারে বানিয়ে নেওয়া যায়। শুধু দেখতে হবে, তার গায়ে যেন ফুটো না থেকে যায়। তাই টিনের গায়ে দস্তার আস্তরণ দিতে হবে। ঢাকা বসে যেতে হবে এমন ভাবে, যাতে হাওয়া না ঢুকতে পারে।
ধান সংরক্ষণের আগে খুব ভাল ভাবে শুকোতে হবে। সাধারণত ধান ওঠার পর চাষিরা তা বাড়িতে তোলার জন্য তাড়াহুড়ো করেন। তাই একদিন বা দু’দিন ধান শুকিয়েই তা বস্তায় পুরে ফেলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কড়া রোদে তিন থেকে চার দিন ধান শুকোতে হবে। তারপরেও মাসে অন্তত একবার ড্রাম থেকে ধান বার করে রোদে শুকোতে হবে।
ধানের গোলার ক্ষেত্রে বাইরের হাওয়া থেকে ধান বাঁচানো খুব মুশকিল। সনত্‌বাবু জানালেন, অন্যান্য রাজ্যের বড় চাষিরা তাঁদের গুদামের জন্য সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজিং কর্পোরেশন থেকে শংসাপত্র নেন, যার ফলে গুদামের পরিকাঠামো এবং সংরক্ষণ প্রযুক্তি তৈরি করতে সহায়তা মেলে। ওই নিয়মগুলি মেনে গুদাম তৈরি করলে শস্য নষ্ট হয় অতি সামান্য। এ রাজ্যে অবশ্য ওই শংসাপত্র নেওয়ার প্রচলন নেই। হয়তো ২০ হাজার টাকা ফি দেওয়ার বিষয়টি চাষিরা এড়িয়ে যেতে চান। কর্মশালায় এসেছিলেন স্থানীয় চাষি নিতাই সরকার। তিনি বলেন, “দু’বিঘা ধান চাষ করি, কিন্তু প্রতি বছরই অনেকটা ধান নষ্ট হয় বলে বেশি দিন ধান বাড়িতে রাখতে পারি না। বাজারে দাম ওঠার আগেই বেচে দিতে হয়।” শিবিরে উপস্থিত বেশির ভাগ চাষিরই জমির পরিমাণ কম। সংরক্ষণে জোর দিলে লাভ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.