মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প এখনও গতি পেল না। এ জন্য ভোটের পরে এখনও বিভিন্ন পঞ্চায়েতের স্থায়ী সমিতি এবং গ্রামোন্নয়ন সমিতি গঠন না হওয়া এবং বর্ষাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত জেলা প্রশাসনের কর্তারা। আপাতত, মজুরের তুলনায় কাঁচামাল বেশি ব্যবহার হয়, এমন প্রকল্প নিয়ে ১০০ দিনের কাজে গতি আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর শরৎসদনে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, ১০০ দিনের প্রকল্পে চলতি অর্থবর্ষে কতদিন কাজ দেওয়া গিয়েছে জবকার্ডধারীদের? আধিকারিকরা জানান, মাত্র ১৩ দিন। এ কথা শুনে রেগে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পে গতি না আসার পিছনে পঞ্চায়েত ভোট এবং বর্ষাকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও সন্তুষ্ট হননি মমতা। কাজে গতি আনতে হবে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের জানান তিনি।
সেই বৈঠকের পরে ১৮ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু কাজে গতি আসেনি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। কাজ পাওয়ার দিনের ক্ষেত্রেই যে শুধু জেলা পিছিয়ে আছে তা নয়, টাকা খরচের অঙ্কেও বেশ পিছিয়ে। এ কথা জানা গিয়েছে ১০০ দিনের প্রকল্পের রাজ্য সেল থেকেই। ওই সেল সূত্রের খবর, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের জন্য জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পে খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৯৬ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাস কেটে যাওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, ১২ কোটি টাকার বেশি কাজ হয়নি। ফলে, বাকি ছ’মাসে টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের মনে। অন্য দিকে, বরাদ্দ টাকার ৮০ শতাংশ খরচ করতে না-পারলে আবার পরবর্তী বরাদ্দ আসে না। তাই জেলায় যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী যদি টাকা আসে তা হলে সেই টাকার অন্তত ৮০ শতাংশ খরচ করতেই হবে। না হলে পরবর্তী বরাদ্দ আটকে যাবে।
কেন এই প্রকল্পে প্রত্যাশিত গতি আসেনি? প্রকল্পের জেলা সেল সূত্রের খবর, ওই কাজে মূল পরিকল্পনা করে পঞ্চায়েত। তারাই টাকা চেয়ে পাঠায়। পঞ্চায়েতের কাছে আবার পরিকল্পনাগুলি উঠে আসে গ্রামোন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে। কিন্তু ভোটের পরে পঞ্চায়েতে নতুন বোর্ড গঠন করা হলেও সেগুলি এখনও ঠিকমতো কাজ শুরু করতে পারেনি। অনেক জায়গাতেই তৈরি হয়নি পঞ্চায়েতের স্থায়ী সমিতি এবং গ্রামোন্নয়ন সমিতি। তার উপরে রয়েছে বর্ষা। সব মিলিয়ে কাজে গতি আনা তো দূরের কথা, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে।
তবে, টাকা দ্রুত খরচের জন্য জেলা প্রশাসনের কর্তারা জরুরি ভিত্তিতে মজুরের তুলনায় কাঁচামাল বেশি ব্যবহার করা যায়, এমন সব প্রকল্প হাতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ব্লক প্রশাসনগুলিকে। ওই প্রকল্পে প্রচলিত ভাবে কোনও কাজের পরিকল্পনা করা হলে তার জন্য বরাদ্দের ৬০ শতাংশ পান শ্রমিকেরা, বাকি ৪০ শতাংশ খরচ হয় কাঁচামাল কেনায়। তবে, ওই অনুপাতের রদবদল ঘটিয়েও যে বেশি দিন চালানো যাবে না, তা মেনে নিয়ে প্রশাসনের এক কর্তা জানান, গতি আনতে ওই পন্থা নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
তবে, এ ভাবে বেশি দিন চালানো যাবে না। আর্থিক বছরের শেষ দিকে ফের শ্রমনিবিড় প্রকল্পগুলি হাতে নিতে হবে যাতে সারা বছরের খরচের গড় নিয়মানুযায়ী অর্থাৎ ৬০:৪০ অনুপাতেই রাখা যায়। |