|
|
|
|
...সময় এল কাছে
|
নন্দলালের আলপনা থেকে
আবোল-তাবোলের দুনিয়া
শান্তনু ঘোষ |
|
‘এক এক্কে এক
দুয়েক্কে দুই
নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ওই ঘরে
নন্দীবাড়ির আটচালাতে কুমোর ঠাকুর গড়ে
মন বসে
কি আর’
সত্যিই আর মন বসছে না। ক’দিন পরেই তো পুজো। মিষ্টুদের পাড়ার মাঠে তৈরি হচ্ছে মা দুগ্গার ‘বাড়ি’। তার দেওয়ালে পাড়ার দিদিরা সাদা, লাল রং দিয়ে কী সব যেন আঁকছে! ঠিক যেমন নিজের ড্রয়িং খাতায় আঁকিবুকি কাটে মিষ্টু।
মিষ্টুর দিদিদের ওই আঁকিবুকি আসলে ‘আলপনা’, বাংলার লোক-সংস্কৃতিরই এক অঙ্গ। চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর সৃষ্টি এই আলপনাতেই এ বার সেজে উঠছে মিষ্টুদের পাড়া
অর্থাৎ বালির শান্তিনগর সেবা সমিতি-র মণ্ডপ।
তবে এ সব বোঝার দায় নেই ছোট্ট মিষ্টুর। পুজোর মুখে বাবা কিনে দিয়েছে আবোল-তাবোল। বইটাতে কত্তো সব মজার ছবি! সময় পেলেই সুকুমার রায়ের খুড়োর কল, বাবুরাম সাপুড়ে, গোঁফচুরি, কাঠবুড়োকে দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে মিষ্টু। আর সেই চরিত্রগুলোই এ বার জীবন্ত হয়ে উঠছে বালি নবযুব সঙ্ঘের মণ্ডপে।
পেঁচাশিমূল গ্রাম থেকে মিষ্টুদের বাড়িতে এসেছেন রাঙাঠাম্মা। গ্রামের মেলা থেকে মিষ্টুর জন্য তালপাতার ভেঁপু, সেপাই, ডুগডুগি, লাট্টু-সহ অনেক খেলনা কিনে এনেছে ঠাম্মা। তবে রিমোট কন্ট্রোলের খেলনার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই সব খেলনা দিয়েই যে এ বার মণ্ডপ সাজাচ্ছে সালকিয়ার ধর্মতলা পল্লিবাসী বৃন্দ, সে কথা জানলে আরও মজা পাবে মিষ্টু।
শারদোৎসবের ছোঁয়া লেগেছে রাঙাঠাম্মার পেঁচাশিমূল গ্রামেও। আদি সাঁওতাল পরগনার সীমানার এই গ্রামের জেলেদের জালে নাকি এক দিন বড় কিছু একটা জিনিস আটকেছিল। মাছের বদলে উঠেছিল বড় এক দুর্গামূর্তি। সেটাই গ্রামে
এনে শুরু হয় পুজো। সেই ‘ক্ষেপির থান’ই এ বার উঠে আসছে সালকিয়ার ত্রিপুরা রায় লেনের আলাপনীর পুজোয়।
পেঁচাশিমূল গ্রামে বিভিন্ন গাছের জঙ্গল থাকলেও মিষ্টুদের শহরে গাছপালা এখন নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। উষ্ণায়নের যুগে গাছ না থাকলে পৃথিবীর কী ক্ষতি হতে পারে, সেটাই সালকিয়া ছাত্র ব্যায়াম সমিতি-র পুজোর থিম।
ঘন জঙ্গলে একলা চলতে গা ছমছম করে। আর তা যদি হয় মাওবাদীদের ডেরা, তা হলে তো কথাই নেই। যৌথবাহিনীর টহল, গুলির শব্দ এ সবের মাঝেও কি দুর্গাপুজোর বাদ্যি বাজবে জঙ্গলমহলে? সেটা দেখতেই এ বার সালকিয়ার রামলাল মুখার্জি লেনের অগ্রদূত ক্লাব পাড়ি দিচ্ছে সেই জঙ্গলে। বালি বাদামতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির ভাবনায় এ বার যামিনী রায়। শিল্পীর বিভিন্ন ছবি, মাটির সরা, রঙিন বাঁশের মণ্ডপ সাজছে দড়ির কারুকাজে। আলোকসজ্জায় পিপলির ঝাড়লণ্ঠন। পুজো মিটলেই কেদারনাথ বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন মিষ্টুর বাবা। কিন্তু সেই প্ল্যান তো ভণ্ডুল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত কেদারনাথই এ বার উঠে আসছে সালকিয়া জটাধরী পার্ক পল্লিবাসীবৃন্দের পুজোয়। এসপ্ল্যানেড ম্যানসনের আদলে তৈরি হচ্ছে বালি দেশবন্ধু ক্লাবের মণ্ডপ।
পুজোর পরে শেষমেশ চিনে যাবে বলেই মনস্থির করেছে মিষ্টুরা। বেড়াতে যাওয়ার আগে জায়গাটাকে একটু ভাল করে চিনে নিতে গেলে মিষ্টুদের যেতে হবে সালকিয়া সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের পুজোয়। সেখানে চৈনিক শিল্পের সম্ভারে সেজে উঠছে মণ্ডপ। পুজোর পরেই বেড়াতে যাওয়া, তাই এখনই মিষ্টুকে সব হোমটাস্ক শেষ করে রাখতে বলেছেন মা। কিন্তু ওর মনে কেবলই বাজছে, ‘ভাল্লাগে না পুজোর সময় পাঠশালার এই পাঠ...’ |
|
|
|
|
|