|
|
|
|
স্থানীয়দের কাজ দিতে গিয়েই
আবাসনে ‘অবহেলিত’ সুরক্ষা
আর্যভট্ট খান |
ছিলেন আবাসনের সাফাইকর্মী, বেশ বদলে হয়ে গেলেন রক্ষী। ভোরে যিনি আবাসনের ঘরে ঘরে দুধ দেন, বেলা বাড়লে তিনিও গেটে দাঁড়ান নিরাপত্তাকর্মীর পোশাক পরে। নিউ টাউনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানকার অধিকাংশ আবাসনের সুরক্ষার হাল অনেকটা এ রকমই।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী রাখা হয় না কেন? আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের জবাব, নিরাপত্তা সংস্থাগুলিই আবাসনে কাজ করে। কিন্তু এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেটের দাবি মেনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজে নিতে হয় ওই নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে। অভিযোগ, এই নিয়ম না মানলে নিরাপত্তার সংস্থাগুলিকে সেখানে কাজ করতে দেওয়া হয় না।
বুধবার সকালে নিউ টাউন থানায় বিধাননগর কমিশনারেটের পদস্থ পুলিশকর্তাদের সঙ্গে নিউ টাউনের বাসিন্দাদের এক বৈঠক হয়। সেখানে নিউ টাউনের বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দারা তাঁদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। সম্প্রতি নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ওয়ানের বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে দিনে-দুপুরে এক মহিলাকে হাত পা ও মুখ বেঁধে ডাকাতি করে দুষ্কৃতীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই আবাসনের নিজস্ব নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা গাফিলতি খুঁজে পায়। এর পরেই কমিশনারেটের পুলিশ উদ্যোগী হয়ে আবাসিকদের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে।
অ্যাকশন এরিয়া টু-এর এক ফ্ল্যাট-মালিকের অভিযোগ, মূলত নিরাপত্তার কারণেই তাঁরা নিউ টাউনে না থেকে অন্য জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন। নাম জানাতে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, “আমরা আবাসনে আসার পরে স্থানীয় সিন্ডিকেটের অনেক দাবিই মেনে নিয়েছি। স্থানীয় ছেলেদের কাছ থেকে দুধ, খবরের কাগজ নেওয়া বা ঘর রং করানোর কাজ করাই। তাতে পাড়ার ছেলেদের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীর কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই প্রশিক্ষণ কোথায়?” ওই আবাসনের আর এক বাসিন্দার বক্তব্য, “গত কয়েক মাসে রাস্তায় আলো এসেছে, জল এসেছে, যানচলাচলও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যত কোনও উন্নতিই হয়নি।” একটি আবাসনের কো-অপারেটিভের এক সদস্য জানাচ্ছেন, ফাঁকা আবাসনের কাছাকাছি পুলিশ পিকেট থাকলে ভাল হয়।
এ দিন নিউ টাউনের ফাঁকা জায়গার আবাসনগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখা হলে বাসিন্দাদের অভিযোগের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় অভিজ্ঞতা। রঙের কাজ থেকে শুরু করে নানা কাজের অছিলায় বিভিন্ন লোকজন আবাসনের গেট দিয়ে ঢুকে যাচ্ছেন খাতায় নিজের নাম নথিভূক্ত না করেই। ওই আবাসনের রক্ষীরা জানালেন তাদের আবাসনে নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে অনেক স্থানীয় মানুষও কাজ করছেন। নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত অবশ্য বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এজেন্সির নিরাপত্তাকর্মীদের যে বেতন আবাসিকরা দেন তাতে স্থানীয় লোক ছাড়া কেউ কাজ করতে চায় না। ফলে স্থানীয়েরাই কাজ করেন। এখানে সিন্ডিকেটের জোর-জুলুমের ব্যাপার নেই।” যদিও কিছু আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা সম্প্রতি রক্ষীদের বেতন বাড়িয়েছেন। কিন্তু পরিষেবা ভাল হয়নি। অনেক সময়ে রাতে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে একটি টর্চও থাকে না।
আবাসনের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “স্থানীয় মানুষদের কাজে নেওয়ার চাপটা এখন কিছুটা কম। স্থানীয়েরা যাঁরা কাজ করতে চাইছেন, তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি আমরা।” বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “নিরাপত্তা এজেন্সিতে সিন্ডিকেটের জুলুমের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তবে আবাসনগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা কয়েকটি নিয়ম মানার কথা বলেছি। আবাসনে সিসিটিভি ও ইন্টারকম ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ফাঁকা আবাসনের কাছে পুলিশ পিকেট বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।” |
|
|
|
|
|