নিজের হাতে গড়া সংস্থাতেই প্রশ্নের মুখে মাইক্রোসফট কর্ণধার বিল গেটস।
ক্রমশ জোরদার হচ্ছে সংস্থার চেয়ারম্যান পদ থেকে বিল গেটসকে সরানোর দাবি। মাইক্রোসফটে লগ্নিকারী মূল ২০টি সংস্থার মধ্যে ৩টি ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পরিচালন পর্ষদে জোরালো সওয়াল করেছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। যদিও এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে বিশ্বের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি।
মাইক্রোসফটে মিলিত ভাবে ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকা ওই তিন সংস্থার দাবি, চেয়ারম্যান হিসেবে গেটসের নীতিতে বাধা পাচ্ছে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরির বিষয়টি। আগামী দিনে নতুন চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার (সিইও) এলেও, গেটসের অধীনে তিনি কতটা স্বাধীন ভাবে সংস্থা পরিচালনা করতে পারবেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। বিশেষত, সফটওয়্যারের পাশাপাশি নতুন ধরনের পণ্য তৈরির বিষয়ে জোর দেওয়ার যে-নীতি সংস্থা নিয়েছে, তার রূপায়ণ সম্ভব নয় বলেই তাদের আশঙ্কা। শেয়ারহোল্ডারদের মতে, এ সবের ফলে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাইক্রোসফট। |
পাশাপাশি, গেটস দীর্ঘ দিন ধরেই মাইক্রোসফটে নিজের শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন। ১৯৮৬ সালে বাজারে নথিভুক্তির আগে তাঁর হাতে সংস্থার ৪৯% শেয়ার ছিল। পরবর্তী কালে পরিকল্পনা অনুসারে প্রতি বছর তিনি ৮ কোটি শেয়ার বিক্রি করেন (আপাতত তাঁর হাতে ৪.৫% শেয়ার রয়েছে)। কিন্তু প্রতি বছর ওই হারে তা বিক্রি করতে থাকলে, ২০১৮ সালের মধ্যে মাইক্রোসফটে গেটসের আর কোনও শেয়ার থাকবে না। সংস্থাগুলির আশঙ্কা, শেয়ার হাতে না-থাকলেও, হয়তো ভবিষ্যতে গেটস সংস্থাটিতে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করবেন। যে-কারণে এখনই গেটসকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা। মূলত, বর্তমান সিইও স্টিভ বামারের উত্তরসূরি খোঁজার জন্য তৈরি বিশেষ কমিটিতে গেটসের কাজকর্ম নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছে ওই সংস্থাগুলি।
২০০০ সালে স্টিভ বামারের হাতে সিইও-র ভার তুলে দেওয়ার পর, ২০০৮ থেকে ধীরে ধীরে মাইক্রোসফটের দৈনন্দিন কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করেননি গেটস। মন দিয়েছেন বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্মে। কিন্তু তার পর থেকে অনেকটাই বদলে গিয়েছে ছবিটা। ৩৮ বছর আগে গেটসের হাতে তৈরি হওয়া যে-মাইক্রোসফট বিশ্বে কম্পিউটারের ভাষাই বদলে দিয়েছিল, গত কয়েক বছর ধরে তা-ই ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে অ্যাপল ও গুগ্লের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে। লড়াইয়ে ফিরতে এক সময়ের সফটওয়্যার সংস্থাকে শেষ পর্যন্ত জোর দিতে হয়েছে বৈদ্যুতিন পণ্য তৈরির কাজে। ভিডিও গেমের বাজারে সোনির প্লে-স্টেশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে তারা তৈরি করেছে এক্স-বক্স। ট্যাবলেট এবং স্মার্ট ফোনের যুগে টিকে থাকতে আনতে হয়েছে সারফেস ট্যাবলেট। উইন্ডোজ স্মার্ট ফোন তৈরি করতে জোট বাঁধতে হয়েছে নোকিয়ার সঙ্গে (গত মাসেই ৭২০ কোটি ডলারে যা কিনে নিয়েছে মাইক্রোসফট)।
স্টিভ বামারের এই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, এর আগে কখনও বিল গেটসের নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা হয়নি। এ দিনের পর বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত শিল্পমহলও। যেখানে এক অংশের মত, মাইক্রোসফট থেকে গেটসের অনেক আগে সরে যাওয়া উচিত ছিল। সেখানেই অপর পক্ষের দাবি, সংস্থায় এখন এমন এক জন কাণ্ডারী প্রয়োজন, যাঁর দূরদৃষ্টি প্রশ্নাতীত। সেখানে গেটসই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি এই কাজ সফল ভাবে করতে পারেন। তবে তার জন্য চেয়ারম্যান নন, গেটসকে ফিরতে হবে সংস্থার সিইও হিসেবে। |